ঈদের পরদিন ২৩ এপ্রিল দুপুরে সাতকানিয়ার উত্তর–পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় একটি চায়ের দোকানে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ শিশু রাফি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। গত শনিবার তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগ থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। ছাড়পত্র পাওয়ার পর মা–বাবার সাথে গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ায় ফিরে গেছে ৫ বছরের রাফি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ২৩ এপ্রিল বিকালে রাফিকে চমেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে (ইউনিট–২) ভর্তি করা হয়। ওই সময় ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ছিলেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট অধ্যয়নরত ডা. অনিক দেউড়ি ও ডা. অন্তরদীপ নন্দী। রোগীর জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। বিষয়টি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. তানজিল ফরহাদকে ফোনে জানানো হয়। ঈদের ছুটিতে ওই সময় গ্রামের বাড়ি থাকলেও ফোন পেয়ে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি। রক্ত জোগাড়ের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় রাফিকে। ডা. তানজিল ফরহাদের নেতৃত্বে সহকারী সার্জন হিসেবে অপারেশন টিমে ছিলেন ডা. অনিক দেউড়ি ও ডা. অন্তরদীপ নন্দী। এনেসথেসিস্ট হিসেবে ছিলেন ডা. স্মৃতি। চার ঘণ্টা ধরে চলে এ অস্ত্রোপচার।
অস্ত্রোপচার বিষয়ে শিশু সার্জারি বিভাগের (ইউনিট–২) সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. তানজিল ফরহাদ বলেন, গুলিটি রাফির পিঠ দিয়ে ঢুকে পেটের উপরের দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলিতে রাফির আঁতিতে ৮টি ফুটো দেখা যায়। পেটে পায়খানাও মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সব মিলিয়ে খুবই জটিল অবস্থা। তবে দীর্ঘ চার ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে গুলিবিদ্ধ অংশগুলোকে সরিয়ে আঁতির দুটি জায়গায় জোড়া লাগানো সম্ভব হয়। অস্ত্রোপচারের পর রাফির শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হতে শুরু করে। সামান্য ব্যথা বা হালকা জ্বর ছাড়া তেমন জটিলতা ছিল না। তবে অস্ত্রোপচারের ৮ম দিনে তার পেট ও পিঠের সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দেয়। পরে নিয়মিত ড্রেসিংয়ে এ ক্ষত শুকিয়ে আসে। ২৮তম দিনে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে সে।
শিশু রাফির সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আনন্দে আবেগতাড়িত ডা. তানজিল ফরহাদ, ডা. অনিক দেউড়ি ও ডা. অন্তরদীপ নন্দী। বিভাগীয় প্রধান, ইউনিট প্রধানসহ ওয়ার্ডের সিনিয়র চিকিৎসকদের নির্দেশনা ও সহকর্মীদের আন্তরিকতায় এ কাজটি সম্ভব হয়েছে বলে জানান তারা।
সফলভাবে অস্ত্রোপচার, নিয়মিত ফলোআপ, ড্রেসিংসহ শিশু রাফির সার্বিক চিকিৎসাসেবায় জড়িত সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রয়াসে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শিশু রাফি বাড়ি ফিরেছে। চিকিৎসকদের জন্য এটাই বড় পাওয়া বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২৩ এপ্রিল সাতকানিয়ার উত্তর–পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন এস এম কামরুল ইসলাম (৪৫) নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক। দুপুর একটার দিকে মুখোশ পরা তিনজন এসে কামরুলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে কামরুল ও দোকানের ভেতর থাকা ৫ বছরের শিশু রাফি গুলিবিদ্ধ হন। রাফি চায়ের দোকানদার শামসুল ইসলামের নাতি। কামরুল এওচিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গার বাসিন্দা। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কামরুলকে প্রথমে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ও শিশু রাফিকে উপজেলার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরে চিকিৎসকের পরামর্শে দুজনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়।