পৃথিবী নামক এই গ্রহে জনবহুল ক্ষুদ্র আয়তনের ব-দ্বীপ খ্যাত নদীমাতৃক প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। একদিকে রয়েছে সুজলা সুফলার উর্বর সমারোহ; অন্যদিকে বিশ্বখ্যাত বহু নদী বা সমুদ্রের বিশাল জলতরঙ্গের নান্দনিক ও শ্রুতিমধুর প্রতিধ্বনি। স্রষ্টার অপার কৃপায় অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এদেশ বরাবরই ছিল অনগ্রসর। কথিত প্রাগ্রসর ঔপনিবেশিক শক্তির কূটচাল-নিপীড়ন-নির্যাতনের ফলশ্রুতিতে শুধু অনুন্নয়নের উন্নয়ন বিস্তৃত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের উদ্ভাবনী পন্থা অবলম্বনে কার্যকর কোন পদক্ষেপ কোন সময়ে পরিলক্ষিত হয়নি। মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র অর্জনের পর থেকেই অব্যাহত উদ্যোগ বর্তমান পর্যায়ে দেশকে পৌঁছে দিয়েছে। ইতিমধ্যে জাতি সম্যক অবগত হয়েছে যে, স্বাধীনতা অর্জনে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অপরিমেয় সমর্থন-সহায়তা-সহযোগিতার কারণে জাতিকে চিরঋণী করার অকৃত্রিম বন্ধু প্রতিবেশী প্রভাবশালী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আইনি যুদ্ধে জয়ী হয়ে বিগত বেশ কয়েক দশকের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় দেশ সফল হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল অন ল’স অব দ্য সি’স (ইটলস) এবং ২০১২ সালে ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক আদালত পিসিএ কর্তৃক ঘোষিত রায়ের মাধ্যমে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারেরও অধিক সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে; ভারত দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় সমুদ্রসীমা নির্ধারণ এবং উঁচুমার্গের আইনবিদদের নিযুক্ত করে বাংলাদেশকে পর্যুদস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচক্ষণ ও দূরদর্র্শী ভাবনায় সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক আদালতের উপর নির্ভার হয়েছিলেন। এই সাফল্যগাথায় সমুদ্র সম্পদকে যথাযথ আহরণ-ব্যবহার-রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিমান করার অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বস্তুতপক্ষে বাংলার প্রকৃত আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির সোপান রচনা বহুকালব্যাপী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি-সেনা শাসকদের রাষ্ট্র শাসন-স্বৈরতন্ত্র সমর্থিত দলীয় সরকারের কদর্য পাপাচারে বহুলাংশে অবহেলিত ও অনাবিষ্কৃত ছিল।
বাংলার স্বরূপ উপলব্ধিতে কবি জীবনানন্দ দাশ ‘তোমরা যেখানে সাধ’ কবিতায় ‘তোমরা যেখানে সাধ চ’লে যাও – আমি এই বাংলার পারে র‘য়ে যাব;’ অথবা ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতায় ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর:’ পংক্তি উপস্থাপনে আবহমান বাংলার অপার সৌন্দর্যের মহিমা অনুধাবন ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। আমাদের হয়তো অনেকেরই জানা যে, সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী পর্যায় অতিক্রান্তকালে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফ্রান্সিস বার্ণিয়ার ‘ট্রাভেলস ইন দ্য মোগল এ্যাম্পায়ার – ১৬৫৬-১৬৬৮’ অমূল্য গ্রন্থে বহুধা বিবরণীতে বাংলাকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ইতিহাসের বর্ণনায় সেরা সমৃদ্ধশালী দেশ মিসরের গুরুত্ব ছিল মূলত বাংলারই প্রাপ্য। তাঁর মতে; দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রয়োজনীয় দ্রব্য-উৎপাদন ও রসদ সরবরাহ বা চিনি-তুলা-রেশম-সুতিবস্ত্র বিশেষ করে রেশমিবস্ত্র-শোরা-লাক্ষা-আফিম-মোম-লম্বামরিচ-ওষুধ-মাখন ইত্যাদি ইউরোপ ও জাপানে ব্যাপক রপ্তানি করে বিদেশী বেনিয়াগোষ্ঠীর বিপুল অর্থ-সম্পদ উপার্জনের বিষয়টি বরাবরই আড়াল করে রাখা হয়েছিল।
ভারতে ভূ-সম্পত্তির মালিকানা শুধুমাত্র রাজা-বাদশাদের দখলে ছিল বলে পুরো বিশ্ব থেকে সংগৃহীত স্বর্ণ বা রৌপ্যও তাঁদের পরিবার ও বশংবদদের করায়ত্ত ছিল। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অনুপস্থিতি এ সমাজের অচলায়তনকে শুধু দীর্ঘায়িত করেনি; দরিদ্রতার নিষ্ঠুর পরাকাষ্ঠে নিপতিত করেছিল। মনীষী কার্ল মার্কসের মতে, প্রাচীন কাল থেকেই ঊনিশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত অপরাজনীতির মোড়কে প্রশাসনিক গতিশীলতা অবিচল পরিবর্তনহীনতা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম ব্যবস্থার বিরূপ প্রভাবে সৃষ্ট পরিবেশ ভারতবর্ষকে পরনির্ভরশীল অঞ্চলে পরিণত করেছিল। যার নিগূঢ় বিপর্যস্ততা থেকে এখনও বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্র পরিপূর্ণ মুক্ত হতে পেরেছে বলে কোনভাবেই দাবি করা যায় না। সমুদ্র অর্থনীতি (ব্লু-ইকোনমি) সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও সম্পদ আবিষ্কার-আহরণ-প্রয়োজনীয় ব্যবহার এবং দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এর অবদানকে কতটুকু যৌক্তিক ও তাৎপর্যপূর্ণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী।
প্রাসঙ্গিকতায় জাপান-চীনসহ অনেক দেশের সমুদ্র সম্পদের ব্যবহারকে দৃষ্টান্তরূপে দেখা যেতে পারে। জাপানের ভোজন সংস্কৃতিতে ‘নরি’ খ্যাত উপাদেয় বস্তুটি সমুদ্রে ভাসমান নরম শ্যাওলা থেকেই আবির্ভূত। এটি কিন্তু উদ্ভিদ জাতীয় কোন অপ্রাণিজ সম্পদ নয়। সমুদ্রের এই শ্যাওলাকে যথাযথ প্রক্রিয়াজাত করে জাপানের বিখ্যাত খাদ্য তথা সুশী-নরি মাখি-অনিঙ্গিরী-নুডলস জাতীয় সকল খাবারে এই নরি’র ব্যবহার শুধু উপাদেয় নয়; সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারে উৎকৃষ্ট উপমাও বটে। প্রাণিজ সম্পদের মধ্যে শামুক-ইকা-অক্টোপাসসহ বহু ধরনের সুস্বাদু মাছ আমাদের সমুদ্রসীমায় প্রচুর পরিমাণে প্রজনন ও সংগ্রহ করার সুযোগ থাকলেও জাপানি-চীনাদের মতো এসব প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলোকে অবজ্ঞা করে সমগ্র সমুদ্র অর্থনীতি কোনভাবেই প্রাঞ্জল করা যাবে না। ২০১৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় ২য় এবং বিশ্বের ১২তম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সহায়তায় ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (রিমরাড) প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যই ছিল সমুদ্র অর্থনীতির সমৃদ্ধকরণে প্রত্যক্ষ গবেষণা-জ্ঞানসৃজন-উপযোগী মানবসম্পদ উৎপাদন এবং সমুদ্র সম্পদের সুরক্ষা-আহরণ-সংরক্ষণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনসূত্রে জানা যায় যে, মিয়ানমারের সঙ্গে মামলায় নতুন সমুদ্রসীমা অর্জনের দুই বছর পর ২০১৪ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ সমুদ্র সীমানার আনুমানিক ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটারের অধিকার পায় বাংলাদেশ। এরপর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭ সালে ‘ব্লু-ইকোনমি সেল’ গঠন করে সমুদ্র সম্পদ সুরক্ষায় ২০১৯ সালে মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। উক্ত সূত্রমতে জানা যায় যে, বিশ্বের ৪৩০ কোটিরও বেশি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের যোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ সমুদ্রনির্ভর। এ ছাড়াও চীন, জাপান, ফিলিপাইনসহ বেশ কিছু দেশ ২০০ থেকে ৩০০ বছর আগেই সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতির দিকে মনোনিবেশ করেছে। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকাণ্ড হচ্ছে সমুদ্রকে ঘিরে।
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট আয়তনের কাছাকাছি সমুদ্র অঞ্চল অর্জিত হয়েছে। সমুদ্রসীমা বিজয়ের ফলে ব্লু ইকোনমির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুই ধরনের সম্পদ অর্জন করেছে। এর মধ্যে একটি হলো প্রাণিজ আরেকটি হলো অপ্রাণিজ। প্রাণিজের মধ্যে রয়েছে, মৎস্য সম্পদ, সামুদ্রিক প্রাণী, আগাছা-গুল্মলতা ইত্যাদি। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় রয়েছে চারটি মৎস্য ক্ষেত্র। সেখানে ৪৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ৩৩৬ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ৭ প্রজাতির কচ্ছপ, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩ প্রজাতির তিমি, ১০ প্রজাতির ডলফিনসহ প্রায় ২০০ প্রজাতির সামুদ্রিক ঘাস রয়েছে। আরো রয়েছে ইসপিরুলিনা নামক সবচেয়ে মূল্যবান আগাছা। অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে খনিজ ও খনিজ জাতীয় সম্পদ যেমন – তেল, গ্যাস, চুনাপাথর ইত্যাদি। এছাড়াও ১৭ ধরনের মূল্যবান খনিজ বালি। যেমন – জিরকন, রুটাইল, সিলিমানাইট, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, কায়ানাইট, মোনাজাইট, লিকোঙিন ইত্যাদি। যার মধ্যে মোনাজাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমুদ্র সৈকতের বালিতে মোট খনিজের মজুদ ৪৪ লাখ টন। প্রকৃত সমৃদ্ধ খনিজের পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টন। যা বঙ্গোপসাগরের ১৩টি স্থানে পাওয়া গেছে। সমুদ্রসীমা বিজয়ের ৮ বছরে বাংলাদেশের অর্জনের মধ্যে রয়েছে ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ওএনজিসির সঙ্গে দুটি অগভীর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি সান্তোসের সঙ্গে গভীর ব্লক ১১ ও দক্ষিণ কোরিয়ার পোস্কো-দাইয়ুর সঙ্গে গভীর ব্লক ১২ এ তেল-গ্যাসসহ অন্যান্য অপ্রাণিজ খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের চুক্তি হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ মহাপরিকল্পনায় সমুদ্র অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব বিবেচনায় পাঁচ ধরনের কর্মকৌশলও নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিগত জুন মাসে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত ‘সমুদ্রতলের সম্পদে টেকসই উন্নয়ন ঘটিয়ে প্রাপ্ত সুবিধার ন্যায়সঙ্গত বন্টন : স্বল্পোন্নত, ভূ-বেষ্টিত স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ-রাষ্ট্রসমূহের সুযোগ’ শীর্ষক ব্রিফিং অনুষ্ঠানে দেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সহযোগিতার আবেদন জ্ঞাপিত হয়। সাম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সমুদ্র সম্পদ আহরণে কার্যকর জরিপ-গবেষণা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া সমুদ্র সম্পদ থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। ২০২৫ সালে অস্ট্রেলিয়া যেমন এ খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে; তেমনি বাংলাদেশও এধরনের সমুদ্র অর্থনীতিকে সুসংহত-পর্যাপ্ত-সুগভীর মনোযোগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন এই খাতকে যথাযথ বিবেচনায় আনতে হবে। সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে করোনা অতিমারির দু:সহ জীবন-যাত্রাকে সাবলীল স্রোতে বহমান করার লক্ষ্যে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সমুদ্র অর্থনীতির অভিযাত্রা সফল হউক। সকল ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিময়তায় বাঙালি জাতি-রাষ্ট্র উদ্দীপ্ত হয়ে এগিয়ে যাক – বিজয় মাসের এই দিনে এটুকুই প্রার্থনা।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।