দীর্ঘদিন খনন না করায় সীতাকুণ্ড উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ১৩টি খাল ভরাট হয়ে গেছে। খালগুলো দ্রুত খনন করা না হলে আসন্ন বর্ষায় সংলগ্ন গ্রামগুলো প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ভরাট হয়ে যাওয়া খালগুলো হলো সৈয়দপুর ইউনিয়নের ডোমখালী খাল, বদরখাল, বাঁকখালী খাল, ছোট কুমিরার অন্তর খাল, নুনাছরা খাল, বাড়বকুণ্ডের গুপ্তা খাল, কামানীয়া খাল, নডালিয়া খাল, উলানিয়া খাল, গুলিয়াখালী খাল, বাঁশবাড়িয়ার সিকদার খাল, বোয়ালিয়া খাল ও ভাটেরখীল খাল।
জানা গেছে, সাগরের জোয়ারের পানি যাতে লোকালয়ে আসতে না পারে, সে জন্য প্রত্যেকটি খালের মুখে জোয়ার নিয়ন্ত্রক স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু এসব খালের কোনোটিতেই জোয়ার নিয়ন্ত্রক স্থাপন করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। ফলে খালগুলো হারিয়েছে পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা। এ কারণে গত বছরের বন্যায় সীতাকুণ্ডের অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। একদিকে অবৈধ দখলে যেমন খালগুলো সরু হয়ে গেছে, অন্যদিকে পাহাড় কিংবা ওপর থেকে গড়িয়ে আসা বালি-মাটিতে হয়ে গেছে ভরাট। দেখা গেছে, এসব খালের পাশেই রয়েছে ইদিলপুর বিল, শিবপুর বিল, অলিনগর বিল, হাতীলোটা বিল, নডালিয়া বিল, আকিলপুর বিল, আলেকদিয়া বিল, লক্ষণের বিল, ভাটেরখীল বিল ও গুলিয়াখালী বিল। শুষ্ক মৌসুমে খাল থেকে পানি সংগ্রহ করে এলাকার কৃষকরা এসব বিলে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু গত চার বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে উৎপাদন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। এবারের বোরো মৌসুমে ৫০ হেক্টর জমিতে পানির অভাবে চাষাবাদ করা যায়নি। আবার বর্ষা মৌসুমে যখন জমিতে পানি জমে ফসলের ক্ষতি হয়, তখন তা নিষ্কাশন করতে চাইলেও খাল ভরাট থাকায় শত শত একর ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাঁশবাড়িয়া ও কুমিরা এলাকায় দেখা যায়, ওইসব খালের কোনো চিহ্ন এখন নেই। খালগুলো শুকিয়ে মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে।
বাড়ৈয়াঢালা বদর খালে এলাকার কৃষকেরা মরিচ ও বেগুন চাষ করেছে। কৃষক ইকবাল হোসেন জানান, খালটি ১০ বছর আগেও ১৫ ফুট গভীর ছিল। দীর্ঘদিন খনন না করায় খালটি ভরাট হয়ে যায়। এলাকার প্রায় ৩০ জন কৃষকই ওই খালের মাঝখানে বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন করে থাকে।
বাড়বকুণ্ডের গুপ্তখালের পাশে বসবাসকারী আব্দুস সালাম জানান, বর্ষায় খালের পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকায় গত বছরের মত এবারও বন্যায় গ্রামগুলো ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জহিরুল আলম বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে পানি নিষ্কাশনের জন্য কয়েকটি উপখাল সৃষ্টি করে এলাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে হবে। কারণ প্রতিটি এলাকায় বড় খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশনের সুবিধা নেই। দেখা গেছে বন্যায় এক সপ্তাহ পরেও উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত জেলেপাড়াগুলো জলাবদ্ধতায় থাকে।
মুরাদপুর ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে পানি রিজার্ভার সৃষ্টি করে খরা মৌসুমে রবি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এতে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হবে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে মোট আবাদ যোগ্য জমি ৩২ হাজার ৩শ একর। তার মধ্যে সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে ১২ হাজার ৮শ একর জমি। দেখা গেছে, প্রায় ২০ হাজার একর জমি এখনো সেচ সুবিধার বাইরে রয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে প্রায় ২ হাজার কৃষক বোরো চাষ করেছে। যদি পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা পাওয়া যেত তাহলে আরো ৫শ কৃষক বোরো ধানের চাষে এগিয়ে আসতো।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র নাথ জানান, স্থানীয় খালগুলোর পানি প্রবাহের ওপর নির্ভর করে উপজেলার বিভিন্নস্থানে প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়। খালগুলোতে যতটুকু পানি পাওয়া যায় তা সম্বল করে অনেক কৃষক চাষাবাদে নেমে পড়েন। খাল খনন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা স্বেচ্ছায় এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করে খাল খননে এগিয়ে আসতে হবে।