সীতাকুণ্ডে কিশোর অপরাধ দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, ইভ টিজিং মাদক ব্যবসা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা অন্য গ্যাংয়ের সঙ্গে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা। গত এক সপ্তাহে সীতাকুণ্ডে অন্তত এরকম তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
গত ৩ সেপ্টম্বর সীতাকুণ্ড পৌরসভার পন্থিছিলা এলাকার পশ্চিম পাশে ফকিরপাড়া গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খোরশেদ আলম নামের এক সিএনজি টেক্সি চালককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খুনে জড়িত তরুণ আরাফাত হোসেন (২১) বন্ধুদের নিয়ে এলাকায় মাদক সেবন করতো। এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় রয়েছে একাধিক অভিযোগও। গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড পৌরসভার ফায়ার সার্ভিসের সামনে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় একরাম হোসেন (২০) নামে অপর এক টেক্সি চালক। এ খুনের পেছনেও বারবার নাম আসছে কিশোর গ্যাংয়ের। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কিশোর গ্যাং ট্রাক থামিয়ে মালামাল লুট, যাত্রীদের কাছ থেকে টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট, ডাকাতি এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। ইতিমধ্যে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে হানা দিয়ে কয়েকজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে। তারমধ্যে আটক বেশিরভাগই কিশোর বয়সের। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রেমিকাকে বিয়ে করতে সম্মতি না দেয়ায় পিতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারই পুত্র মো. হেলাল হোসেন (১৮)। উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের হাসনাবাদ এলাকার বাবু কলোনিতে এই ঘটনা ঘটে। বেকার ছেলেকে বিয়ে করাতে অসম্মতি জানায় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পিতা বেলাল হোসেনের।
কিশোর অপরাধ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় যে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ তা অস্বীকার করার উপায় নেই। পারিপার্শ্বিক নানা কারণে অনেক আগে থেকেই অপরাধীর তালিকায় নাম এসেছে অল্প বয়সীদের। তিনি মনে করেন পারিবারিক শিক্ষার অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। সন্তানের শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের প্রতি অভিভাবকদের যতটা মনোযোগ দেওয়া দরকার তা প্রায়ই দেওয়া হয় না। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজের সামান্য লাভের জন্য কিশোরদের অপরাধ জগতে টেনে নেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। ফলে একসময় এই কিশোররা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, তিনটি খুনের ঘটনার প্রেক্ষাপট আলাদা। ইতিমধ্যে দুটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছি। মহাসড়কে অটোরিকশা চালক খুনের ঘটনায় আমরা কয়েকটা ক্লু পেয়েছি। তদন্ত করছি। শীঘ্রই এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারবো। এছাড়া তিনটি খুনের ঘটনা কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে তাই কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
অভিযোগ রয়েছে, কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপরতা দেখায়। কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে দায়িত্ব শেষ করে। তারপর নীরব ভূমিকা পালন করায় অপরাধীরা পুনরায় অপরাধ জগতে ফিরে আসে।












