শহীদ সাবের মননশীল সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হিসেবে সুপরিচিত। প্রগতিশীল রাজনীতির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেও তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তরুণ শহীদ বুদ্ধিজীবী তিনি।
শহীদ সাবেরের জন্ম ১৯৩০ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও গ্রামে। ছাত্রজীবনেই তিনি বামপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে যখন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন তখন তিনি ছাত্র ফেডারেশনের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। সে সময় চলছিল সকল প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে মুসলিম লীগ সরকারের ব্যাপক নির্যাতন, দমন-পীড়ন। এরই এক পর্যায়ে ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে শহীদ সাবেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। চার বছর বিনা বিচারে কারারুদ্ধ থাকার পর ১৯৫৪ সালে তিনি মুক্তি পান। জেলখানায় বসে তাঁর কারাজীবনের কাহিনি নিয়ে লেখা ‘আরেক দুনিয়া থেকে’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি গ্রন্থ। ১৯৫৫ সালে সাবের ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ফেডারেল ইনফরমেশন সার্ভিস পরীক্ষায় তিনি প্রথম হয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক বন্দি ছিলেন বলে তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ১৯৫৮ সালের শেষ দিকে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন সাবের। বদ্ধ পাগলের মতো আচরণ করতেন না, কিন্তু প্রকৃতিস্থও ছিলেন না। এ অবস্থাতেও তিনি রচনা করেছেন অনেক কবিতা। নিয়মিত যেতেন সংবাদ কার্যালয়ে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘আরেক দুনিয়া থেকে’, ‘এক টুকরো মেঘ’, শিশু সাহিত্য ‘ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান’ এবং দুটি অনুবাদ গ্রন্থ। কবিতাগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় নি। ১৯৭১ সালের ৩১শে মার্চ কাক ডাকা ভোরে পাক সেনারা সংবাদ অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। সে সময় রোজকার মতো কাজ সেরে অফিসেই ঘুমিয়ে ছিলেন সাবের। অপ্রতিরোধ্য আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় পত্রিকা অফিস। সেই সাথে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান। ১৯৭৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ সাবেরকে সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার [মরণোত্তর] দিয়ে সম্মানিত করা হয়।