একটি শিশু জন্মলাভ করার পর থেকেই নৈতিকতা, মানবিকতা ও জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে। তখন তার ভিতর আবেগ ও বিবেক জাগ্রত হয় এবং সে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু বর্তমান সমাজে আপাত দৃষ্টিতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মানুষের নৈতিকতা ও মানবিকতাবোধের অধঃপতনের ফলে সমাজ আজ অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ে। সময়ের আবর্তনে আমরা এমন একটি পর্যায়ে উপনীত হয়েছি যেখানে সন্তানের হাতে মা–বাবা খুন হয়ে সংবাদের শিরোনাম হন। একজন কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর থেকে তার নিরাপত্তা নিয়ে মা বাবাকে সবসময় শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয়। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে প্রতারণার কবলে পড়ে যাচ্ছে অনেক সম্ভাবনাময় জীবন। বিভিন্ন সমাজ বিরোধী কাজ বিশেষ করে মাদক ও অপহরণ কার্যক্রমে লিপ্ত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে অনেক প্রস্ফুটিত জীবন।
অন্যায়, অবিচার সর্বোপরি অনিয়মই যেন চিরায়ত প্রথা এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছে চারদিকে। ন্যায় বর্জিত চর্চার মাধ্যমে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা মানবিকতায় না গিয়ে দানবিকতায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠছে দিন–দিন। ফলে সমাজে মানুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মানবিকতাবোধ লোপ পাচ্ছে। সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা শিশুর কোমল হৃদয়কে দানবিক করে তোলে, ফলে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে যা কোনও সুশীল সমাজের কাম্য নয়। প্রতিনিয়ত অনিয়ম, যথাযথ শিক্ষার অভাব, ক্ষমতার অপব্যবহার, ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি একজন মানুষকে সামাজিক অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ের দিকে ঠেলে দেয়। প্রত্যেক মা–বাবার তাদের সন্তানকে শিক্ষিত করার ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত থাকে। আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার বাড়লেও চাহিদানুযায়ী সুশিক্ষার হার বাড়েনি বলে মন্তব্য করছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। একজন শিশু সাক্ষর হবার সাথে সাথে মা বাবাকে তাদের সন্তানের মানবিক ও নৈতিক অবস্থান দৃঢ় করার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। পিতা–মাতার মধ্যকার সম্পর্ক, সন্তানের প্রতি তাদের আচরণ, তাদেরকে ভালোবাসা ও সময় দেয়া এগুলো শিশুর সামগ্রিক বিকাশকে প্রভাবিত করে। তাই সামাজিক অবক্ষয় রোধে আমাদের সকলেরই প্রত্যেকের সন্তানের প্রতি আরো যত্নবান হওয়া উচিত।