বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত একটি বিখ্যাত পত্রিকা ‘লাঙল’। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে ১৯২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বরে। পত্রিকাটির পঞ্চদশ ও শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালের ১৫ই এপ্রিল। পরবর্তীকালে এটি মুজফফর আহমদের সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘গণবাণী’র সাথে একীভূত হয়ে যায়।
লাঙল ছিল মেহনতি মানুষের সংগঠন কৃষক-প্রজা-স্বরাজ-সমপ্রদায়’-এর মুখপত্র বিশেষ। এই পত্রিকায় নজরুলের রাজনৈতিক দর্শন সাম্যবাদের প্রকাশ ঘটেছে। পত্রিকাটির প্রত্যেক সংখ্যার শুরুতে থাকতো চণ্ডীদাসের অমর বাণী, ‘শুনহ মানুষ ভাই-/ সবার উপরে মানুষ সত্য/ তাহার উপরে নাই।’ ২৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রথম সংখ্যাতেই ‘সাম্যবাদী’ শিরোনামে এগারোটি কবিতা ছাপা হয়। প্রথম সংখ্যা হিসেবে এটি বিশেষ আকর্ষণীয় করে প্রকাশ করা হয়েছিল। ছাপা হয়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার কপি এবং মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব কপি বিক্রি হয়ে যায়। পত্রিকাটির প্রচ্ছদে আঁকা থাকতো লাঙল কাঁধে এক কৃষকের ছবি। সম্পাদক হিসেবে নজরুলের পরিবর্তে ছাপা হতো কবির ফৌজি বন্ধু মণিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের নাম। নজরুলের নাম ছাপা হতো মুখ্য পরিচালক হিসেবে। কৃষক-প্রজা-স্বরাজ-সমপ্রদায়ের আহ্বায়ক হিসেবে প্রথম সংখ্যাতেই নজরুল সংগঠনের একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন। ‘সাম্যবাদী’ কবিতাগুলোতে কুলি, মজুর, নারী, কৃষক – এমন জনগোষ্ঠীর শোষণ ও বঞ্চনার চিত্র ফুটে ওঠে। লাঙলের অন্যান্য সংখ্যাগুলোতেও মুখ্য ছিল সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ও সাম্যবাদ। নৃপেন্দ্রকিশোর চট্টোপাধ্যায় অনূদিত ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ এই পত্রিকাতেই ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হয়েছিল। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মুজফফর আহমেদ প্রমুখ এই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। কার্ল মার্কস, লেনিন, তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনীতি ইত্যাদি ছিল পত্রিকাটিতে প্রকাশিত বিভিন্ন রচনার মুখ্য বিষয়। সেই সাথে প্রতি সংখ্যায়ই বিশেষ আকর্ষণ ছিল নজরুলের কবিতা। ‘কৃষাণের গান’, ‘সব্যসাচী’, ‘সর্বহারা’র মতো বিখ্যাত কবিতা এই পত্রিকাতেই প্রথম ছাপা হয়েছিল।