সাধারণের ভেতর থাকে অসাধারণত্বের আনন্দ

মিতা দাশ | শুক্রবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

বেতার থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তার দুই পাশেই গাড়ির তীব্র যানজট। আমি ভাবলাম এই জ্যাম ছুটার আগে কিছুটা হেঁটে সামনে চলে যাই। যখন গাড়ি চলতে শুরু করবে তখনই গাড়িতে উঠে যাব।
ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি, ব্রিজের কাজের জন্য রাস্তায় বেশ কাদা। অনেক লোক তার উপর দিয়েই খুব স্বাভাবিক ভাবেই হেঁটে যাচ্ছে। কেউ কেউ এমন হনহনিয়ে কাদার উপর হেঁটে যাচ্ছে মনে হয় এটা মসৃণ একটা রাস্তা। আসলে জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ যে কত ব্যস্ত সেটাই দেখছিলাম আমি অবাক হয়ে। পথের ওপর বিভিন্ন ছোট ছোট পথ শিশুদের দেখছি,ওরা মনের আনন্দে কাদায় লাফিয়ে লাফিয়ে খেলছে। পথের দু ধারে ভ্যানে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে দোকান, রাস্তায় চা তৈরি,, বিভিন্ন পিঠার দোকানও দেখতে পেলাম। লোকজন সেখান থেকেই জিনিসপত্র সব কিনছে, আমি চারিদিকে তাকিয়ে হাঁটছি। অন্যসময় নিজের গাড়িতে করে যাওয়ার সময় খুবই তাচ্ছিল্যের সাথে বলতাম, ইস, কি বাজে অবস্থা? ছোট ছোট বাচ্চাগুলো কি অপরিষ্কার? কিন্তু আজ যখন দেখছি, যাদের হিসাব করে চলতে হয়, তারা কত কষ্ট করে বাসে উঠার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তায়। কারে করে যাওয়ার সময় এই কাদা মাখা মাটি দেখে কতবার নাক সিটকে বলতাম, ইস, এরা কত নোংরা, ময়লার ভেতরেও হাঁটাহাঁটি করে কি করে? আজ নিজে ওদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভাবছি পকেটে টাকা না থাকলে মানুষ তখন ঠেলে, দাঁড়িয়ে টেম্পো বা বাসে চড়ে অথবা মাইল কি মাইল হেঁটে বাসায়ও ফিরে। অথচ ওদের কষ্টের কথা কখনো ভাবিনি। আর আমার মতো কিছু লোকের সামান্য টাকা থাকলে টেঙীতে বা কারে চড়ে কত আরাম করে যায় অথচ রাস্তার এই লোকেদের কষ্টের কথা কিছুই ভাবিনা আমরা। আজ কাদার ওপর হাঁটতে হাঁটতে আর ঘেন্না লাগছে না। ওদের মতো আমিও আজ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে মনে হচ্ছে সাধারণভাবে বাঁচার মধ্যে অন্য রকমের আনন্দ আছে। মিথ্যাই শুধু আমরা বড়মানুষি দেখায়। আসলে বড় হতে গেলে মনটাই শুধু বড় করতে হয়। সাধারণের ভেতর থাকে অসাধারণত্বের আনন্দ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন : ভাবতে হবে প্রার্থী নির্বাচিত করার আগে
পরবর্তী নিবন্ধস্মৃতিতে সমুজ্জ্বল আমার বাবা বিমলেন্দু বড়ুয়া