সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| রবিবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে ৪৭ দশমিক ১৭ শতাংশ মানুষ উদ্বিগ্ন। এছাড়া দেশের ৩৩ দশমিক ৯১ শতাংশ মানুষ বলেছে শারীরিক হামলার আশঙ্কায় থাকার কথা। ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে হামলার শঙ্কার কথা জানিয়েছে ৪১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দৃশ্যমান উন্নতি আনা জরুরি। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে শুধু ভোটার উপস্থিতিই বাড়বে না, বরং নির্বাচনের প্রতি আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেশের ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগে (বিদেশী বিনিয়োগসহ) নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে দেশের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে সরকারকে দ্রুত দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

গত বেশ কিছুদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে এবং এর পরিসর বিস্তৃত হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সন্ত্রাস তথা সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কোনো কোনো নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেই সুযোগসন্ধানী অপরাধীচক্র এর ফায়দা লুটছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পরিচয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। একই দিন ভিন্ন আরেকটি প্রতিবেদনে জানা গেছেরাস্তায় তো বটেই, এমনকি বাসাবাড়িতে পর্যন্ত গিয়ে চাঁদাবাজরা চাঁদা দাবি করছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ডসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির বার্তা জনমনে চরম উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করে। সেখানে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে যৌথ অভিযানে ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হলেও জনমনে অস্বস্তিউৎকণ্ঠা রয়েই গেছে। সংবাদমাধ্যমে আরও প্রকাশ, প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুনখারাবির পাশাপাশি জননিরাপত্তাহানিজনিত অনেক ঘটনা ঘটলেও সবই সংবাদমাধ্যমেও উঠে আসছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো স্থিতিশীল সমাজের অন্যতম শর্ত জননিরাপত্তা। টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও জননিরাপত্তার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সন্দেহ নেই, উন্নয়নঅগ্রগতির পথে আমরা হাঁটছি। কিন্তু জননিরাপত্তাসামাজিক শৃঙ্খলা এবং প্রাতিষ্ঠানিকঅপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নিয়মনীতির যথাযথ প্রতিপালন ইত্যাদি জরুরি বিষয় এখনও অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অপরাধ সমাজের অন্যতম গুরুতর ব্যাধি এবং এই ব্যাধি উন্নয়নঅগ্রগতির অন্যতম প্রতিবন্ধক। স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে এ রকম তিক্ত অভিজ্ঞতা ইতঃপূর্বে আমাদের সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজে অপরাধ বৃদ্ধির মতো উদ্বেগজনক পরিস্থিতির উদ্ভব কিংবা জিইয়ে থাকা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।

বিশ্লেষকরা বলেন, বাস্তবতা পর্যালোচনায় বলা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দেশবাসীর জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশবাসী রাস্তায় চলার সময় দিন, দুপুর, রাতেকখনোই নিরাপদবোধ করছে না। প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অরাজকতা দেখতে হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে উদ্বেগউৎকণ্ঠা। ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদবিক্ষোভ হচ্ছে। এছাড়া প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা, গণপিটুনিতে হত্যা, বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করারও ঘটনা রয়েছে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছেন। আমরা চাই সরকার জননিরাপত্তা নিশ্চিতে যা যা করা প্রয়োজন সেইসব পদক্ষেপ আগে নেবে। কারণ দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অবশ্যই সরকারের দায়িত্ব।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রের পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভূমিকা পালন করা উচিত। পুলিশ প্রশাসনকে দুষ্কৃতিকারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের নানা ধরনের দায়িত্ব রয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সেই সঙ্গে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে জোরদার অভিযান পরিচালনাও করা উচিত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার পেছনে কোনো অজুহাত থাকতে পারে না, থাকা উচিত নয়। প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে হবে। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনকে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে