নতুন কমিটির গ্যাড়াকলে পড়ে নগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বছরের পর বছর পার। বছরের প্রত্যেক মাসই শোনা যায় নতুন কমিটি দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩ মাসের নগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটি পার করেছে ৭ বছর।
এদিকে নগর ছাত্রলীগও পার করেছে ৭ বছর। আর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ পার করেছে ১৯ বছর। একেবারে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের এই অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গুলোতে (নগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ) দীর্ঘ সময় ধরে কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বে বিরাজ করছে স্থবিরতা । নেতৃত্বের বিরোধ আর কোন্দলে জর্জরিত নেতারা।
মহানগর যুবলীগ : ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। ওই কমিটিতে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক ও দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। সূত্র জানায়, নির্দেশনা ছিল এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। কিন্তু ৭ বছরে মাত্র ৫টি ওয়ার্ডে সম্মেলন করেছে নগর যুবলীগ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর হয়নি। বর্তমানে নগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়করা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ছাড়া অপর চার যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমন এক সাথে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন।
মহানগর ছাত্রলীগ : ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রণিকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্যের চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৪ সালের ১১ জুন ২৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি পদত্যাগ করলে জাকারিয়া দস্তগীরকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ওই কমিটিতে ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাকারিয়া দস্তগীর। শুরু থেকেই নগর ছাত্রলীগ বেশ ভালোভাবেই সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে।
গত ১৯ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাকারিয়া দস্তগীরকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
মহানগর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ, বিবাহিত অছাত্রদের এই কমিটি ভেঙে দেয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন ওই কমিটিরই একাংশ, যারা কিনা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর প্রায় দীর্ঘ ১২ বছর নগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষিত হয়েছিল কেন্দ্র থেকে। বর্তমানে এই কমিটির মেয়াদ ৭ বছর পার হয়েছে। বর্তমান কমিটি নগরীর প্রতিটি থানা ও কলেজ কমিটিগুলো সমঝোতার মাধ্যমে ঘোষণা করে সম্মানের সাথে নেতৃত্ব থেকে বিদায় নিতে চান বলে জানান নেতৃবৃন্দ।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঃ চট্টগ্রাম স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। বর্তমানে এ কমিটির মেয়াদ ১৯ বছর পার হয়েছে। দীর্ঘ এত বছরে কখনও হয়নি সম্মেলন, নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটিও। হয়নি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি। ১৯৭২ সালে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নামে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের এই অঙ্গ সংগঠনটির ২০০১ সালের পূর্বে সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মকান্ড ছিল না চট্টগ্রাম নগরীতে। এতে অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়া উদ্দিনকে আহবায়ক, যুগ্ম-আহবায়ক কেবিএম শাহজাহান, সালাউদ্দিন আহমেদসহ ২১ সদস্য বিশিষ্ট প্রথম আহবায়ক কমিটি দিয়েই নগরে এ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। এই কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়করা পরীক্ষিত ছাত্রনেতা। তারা দীর্ঘ বছরগুলোতে নগরীর আনাচে-কানাচে এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জানা গেছে, কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়করা দীর্ঘদিন থেকে নতুন নেতৃত্বের কাছে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দিতে চাচ্ছেন। এই কারণে কার্যত ঝিমিয়ে পড়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড।