সাগরে মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় এ নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
ট্রলার মালিকরা জানান, সাগরে মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত শুক্রবার রাত ১২টার আগেই কক্সবাজারের সকল মাছধরার নৌকা বঙ্গোপসাগর থেকে ঘাটে ফিরে আসে। ট্রলারগুলো বর্তমানে শহরের বিভিন্ন নদী ও ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে বলে জানান জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চলতি মাসে সাগরে ৪/৫দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। ঘূর্ণিঝড় শেষে গত ১৬ মে থেকে ট্রলারগুলো পুনরায় সাগরে মাছ ধরতে গেলেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে যেতে না যেতেই আবারও ঘাটে ফিরে আসে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বর্তমানে কক্সবাজারের প্রায় ৭ হাজার ইঞ্জিন নৌকার লক্ষাধিক জেলে–শ্রমিক ও মৎস্য ব্যবসায়ী বেকার হয়ে পড়েছে।
ট্রলার মালিকরা জানান, সাগরে মাছধরা বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কঙবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে।
কঙবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে মাছধরা ও পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এখন খা খা প্রান্তরে পরিণত হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষে শুক্রবার মধ্যরাত ১২টা থেকে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখতে প্রচার–প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কেউ এ সময়ে সাগরে গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে।












