বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল নিয়ে ক্ষোভ, কিছু দাবি

অভিযোগ ইজারাদার ও সিডিএর বিরুদ্ধে নগরজুড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড, নতুন টার্মিনাল চায় সিএমপিও

ঋত্বিক নয়ন | রবিবার , ২১ মে, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

১৯৯৫ সালে নগরীর বহদ্দারহাটে নির্মাণ করা হয় একটি টার্মিনাল। পরে কদমতলীতে রেলওয়ে থেকে ইজারা নিয়ে সীমিত পরিসরে গড়ে ওঠে আরেকটি টার্মিনাল। এরপর আর কোনো টার্মিনাল গড়ে উঠেনি। অথচ নগরীর ৬০ লাখ লোকের মধ্যে ৪০ লাখের বেশি অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দা।

প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ ৩০ হাজারের বেশি যানবাহনে চট্টগ্রামে আসাযাওয়া করে। বাস টার্মিনালের অভাবে নানা সমস্যা আর ভোগান্তিতে পড়তে হয় পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের। স্থায়ী কোনো বাস টার্মিনাল না থাকায় দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরকে অঘোষিত টার্মিনাল বানিয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ওঠানামা করানো হচ্ছে যাত্রীদের। নগরীতে এ রকম অন্তত ২০টির বেশি অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ড রয়েছে।

এতে নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। আন্তরিকতা ও সরকারি সংস্থাগুলো একমত হতে না পারাকে এর জন্য দুষলেন পরিবহন নেতারা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের (পূর্বাঞ্চল) সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাদের মধ্যেও নানা দ্বন্দ্ব আছে। কখনো বলে সিডিএ করবে, কখনো বলে সিটি কর্পোরেশন করবে। পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, প্রতিদিন ছয় হাজারের বেশি আন্তঃজেলা বাস ও ট্রাক চট্টগ্রাম শহরে আসাযাওয়া করে। কিন্তু স্থায়ী বাস টার্মিনাল আছে মাত্র দুটি আর ট্রাক টার্মিনাল একটি। বৈধ স্ট্যান্ডে ঠাঁই না থাকায় অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠছে। আরো স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সে দাবি পূরণ হয়নি। স্থায়ী বাস টার্মিনাল দুটি বহদ্দারহাট ও কদমতলী এলাকায়। স্থায়ী ট্রাক টার্মিনালটি নিমতলায়। গরিবুল্লাহ শাহ (রহ.) মাজারসংলগ্ন সড়ক মোড়, অঙিজেন মোড়, চান্দগাঁও, শাহ আমানত সেতুসংলগ্ন সড়ক, কদমতলী বিআরটিসির বাসস্ট্যান্ড থেকে স্টেশন রোড, মাদারবাড়ী, অলংকার মোড় থেকে এ কে খান গেট ও বড়পুল এলাকায় অবৈধ বাসস্ট্যান্ডগুলোর অবস্থান। অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ডগুলো গড়ে উঠেছে পোর্ট কানেকটিং রোড, পাহাড়তলী ডিটি রোড চাল বাজারসংলগ্ন সড়ক, বারো কোয়ার্টার, মনসুরাবাদ, কাঁচা রাস্তা, বড়পুল, নিমতল, সল্টগোলা, কদমতলী, মাদারবাড়ী, সদরঘাট, মাঝিরঘাট, বাংলাবাজার ও অঙিজেন মোড় এলাকায়।

গতকাল এক সভা থেকে বক্তাগণ সিডিএর নির্মিত বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনালটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে গাড়ি রাখার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সিডিএ কর্তৃপক্ষ ও লিজ গ্রহীতাদের দায়ী করে অবিলম্বে সংস্কারের কাজ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, লিজ গ্রহীতা ও সিডিএ কর্তৃপক্ষ পরস্পরের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মো. মুছা আজাদীকে বলেন, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে গিয়ে পুকুরসম গর্তে পড়ে গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হওয়াসহ গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বার বার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ইজারাদারপক্ষ ইজারার টাকা নিয়মিত আদায় করা সত্ত্বেও টার্মিনালে কোনো আলোর ব্যবস্থা ও পাহারাদারের ব্যবস্থা রাখেনি।

এদিকে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সিএমপি থেকে চসিককে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে গাড়ি রাখার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তাই সকল বাস নতুন ব্রিজ এলাকাজুড়ে পার্কিং করার ফলে সেখানে যানজট হচ্ছে। ওই চিঠিতে অলংকার মোড় অথবা সিটি গেট সংলগ্ন সুবিধাজনক স্থানে ঢাকামুখী ও দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আগত বাসের জন্য টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া বন্দরের টোল রোডের পাশে, বন্দর সংলগ্ন স্থান ও স্টিল মিল ৭ নং সল্টগোলা খালি জায়গার যেকোনো একটিতে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি, লংভেহিকেল ও প্রাইমমুভারের জন্য টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। নির্মাণাধীন চাক্তাই খালের উপর সংযোগ সেতু এলাকার পূর্ব দক্ষিণাংশে দ্বিতীয় শাহ আমানত সেতুর গোড়ায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের পরিত্যক্ত জায়গায় দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী নিকটবর্তী উপজেলার বিভিন্ন রুটের মিনিবাসের টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।

বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল সংস্কারসহ ৪ দফা দাবিতে গত বছরের ৮ নভেম্বর দুই ঘণ্টার প্রতীকী পরিবহন ধর্মঘট ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটি।

বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, এ টার্মিনাল থেকে প্রতি বছর ২১ লাখ টাকা ভাড়া পায় সিডিএ। কিন্তু সিডিএ টাকা নিয়ে গেলেও বছরের পর বছর কোনো সংস্কার করেনি। ফলে পুরো বাস টার্মিনালটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটু সমান পানি জমে এ টার্মিনালে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আমাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। আমাদের দাবি পূরণ করা না হলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাব। অন্য দাবিগুলো হচ্ছে, টর্মিনাল সংযোগ সড়ক অবৈধ দখলমুক্ত করা, শাহ আমানত সেতু এলাকায় মিনি টার্মিনাল নির্মাণ এবং সড়কে অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধ করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলাউয়াছড়ায় উদয়ন এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন-বগি লাইনচ্যুত
পরবর্তী নিবন্ধসাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু