করোনো পরিস্থিতিতে চালু হওয়া ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম উঠিয়ে গত দু’মাস ধরে চট্টগ্রাম আদালতে চলছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। বর্তমানে মহানগরের ২১টি আদালতে দৈনিক গড়ে অন্তত ১০০টি মামলার শুনানি হচ্ছে। তবে মামলার নিষ্পত্তির হার তুলনামূলক কম। এরমধ্যে প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা দায়ের হচ্ছে। এতে অনিষ্পন্ন মামলার জট দিনদিন প্রকট আকার ধারণ করছে।
আদালতের তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা আদালত ও মহানগর হাকিম আদালত মিলে ৭০ হাজারের অধিক মামলা অনিষ্পন্ন পড়ে আছে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, করোনোর কারণে মাঝখানে আদালতের কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ ছিল। একসময় সীমিত আকারে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা হয়। এই কোর্টে সাধারণত জামিন আবেদনের উপর শুনানি হত। তবে সেখানে বিচারকার্য, আপিল, নিষ্পত্তিসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হত না। এতে মাঝখানে কয়েক মাস পেন্ডিং মামলাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তিনি আরো বলেন, সাক্ষী না আসলে মামলার নিষ্পত্তি করা যায় না। বর্তমানে সাক্ষীর গড় হাজিরা ৭/৮ শতাংশের মতো। ফলে মামলা নিষ্পত্তির হার তুলনামূলক কম।
মহানগর আদালতের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজের ১৩টি ও চট্টগ্রাম মহানগর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ৮টির সবকটি আদালত বর্তমানে নিয়মিত বসছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ৮টি আদালতে ১৩৭ কার্যদিবসে অনিষ্পন্ন বিভিন্ন মামলায় ২৬২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। এসময় ৬০টি ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে একই সময়ে নতুন করে আরও ৯৮১টি ফৌজদারি মামলা বিচারের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোতে জমা পড়েছে এবং ১০টি মামলার বিচারিক ফাইল ভিন্ন আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ১৭ হাজার ৬৯৮টি বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। একই আদালতগুলোতে গত আগস্ট পর্যন্ত জেনারেল ফাইল হিসেবে বিচারের অপেক্ষায় ছিল ২২ হাজার ৫৬৭টি ফৌজদারি মামলা। গত মাসে নতুন করে সেখানে যোগ হয়েছে আরও ১ হাজার ৮৫৬টি ফৌজদারি মামলা। এরমধ্যে বিচারকার্য শুরুর জন্য ৪৭৮টি মামলা দায়রা আদালতে এবং ৯৯০টি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে জেনারেল ফাইল হিসেবে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে ২২ হাজার ২১৬টি ফৌজদারি মামলা। এছাড়া গত মাসে মহানগর দায়রা জজের ১৩টি আদালতে ২১৮ কার্যদিবসে মোট ৫০৫ জন সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। একই মাসে ১০৩৪টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বর্তমানে মহানগর দায়রা আদালতে ৪৪ হাজার ৬৮৩টি মামলা অনিষ্পন্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে বলেন, আমাদের বিচারক সংকটের কারণে মামলার বিচার কার্যক্রমও ধীরগতিতে চলছে। একটি মামলার বিচারকার্য যখন বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে তখন পরবর্তীতে দেখা যায় ওইসব মামলার সাক্ষীগুলোকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
সাক্ষীদের ঠিকানা পরিবর্তন, সরকারি কর্মচারি হলে অবসরে যাওয়া, অনেকের বিদেশ চলে যাওয়া কিংবা সাক্ষী মারা যাওয়ায় পরবর্তীতে সাক্ষীদের হাজির করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এতে বছরের পর বছর মামলাগুলো পেন্ডিং অবস্থায় পড়ে থাকছে। তিনি বলেন, কোনো মামলায় একাধিকবার সমন জারির পরও সাক্ষীরা উপস্থিত না থাকলে ওয়ারেন্ট দিয়ে সাক্ষীদের হাজির করার নিয়ম রয়েছে। এরপরও যদি সাক্ষী না আসে তাহলে আদালত তার নিজস্ব গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ এক বা দু’জন সাক্ষীর ভিত্তিতে মামলার নিষ্পত্তি করা যায়। জিয়া হাবীব আরো বলেন, সাক্ষীর অপেক্ষায় বছরের পর বছর ধরে মামলা ঝুলে থাকা মামলার বাদী ও বিবাদী উভয়ের জন্যই কষ্টকর। এটা রাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর। এজন্য সাক্ষী পাওয়া গেলেই যেন সাথে সাথে তার সাক্ষ্য নেয়া হয়। সাক্ষীকে পরবর্তী সময়ে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। সাক্ষীর বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।