সরদার ফজলুল করিম – বিশিষ্ট দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, লেখক ও মনীষী। প্রগতিশীল ও সাম্যবাদী আন্দোলনের কিংবদন্তি তিনি। দীর্ঘ সাড়ে চার দশক ধরে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক দর্শনচর্চার গতিধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন। সরদার ফজলুল করিমের জন্ম ১৯২৫ সালের ১মে বরিশাল জেলার উজিরপুরে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ২য় স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে বি.এ অনার্স ও এম.এ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই সাম্যবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে ফজলুল করিম পাকিস্তান সরকারের কোপানলে পড়েন এবং চার দফায় পুরো পাকিস্তান আমলটাই কারারুদ্ধ থাকেন। কারাবন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণের দাবিতে অন্যান্য রাজবন্দির সাথে তিনি ৫৮ দিনের অনশনে অংশগ্রহণ করেন এবং কারাবন্দি অবস্থাতেই পাকিস্তান কনস্টিটুয়েট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি প্রথমে দর্শন এবং পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তাঁর আজন্মের আকাঙ্ক্ষা ছিল শোষণ-বৈষম্যহীন শ্রেনিসমাজ প্রতিষ্ঠা। কমিউনিস্ট পার্টির সংশ্লিষ্টতা ও আদর্শে তিনি ছিলেন অবিচল। জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে ছিলেন সর্বত্রগামী। কেবল তাত্ত্বিকতায় নিজেকে আবদ্ধ না রেখে রাজনীতির মূলধারায় সরাসরি অংশ নিয়ে সমাজ বদলের সংগ্রামে শামিল হয়েছেন। জ্ঞান, মুক্তচিন্তা ও ভাবনার মনোজগতের আলো তিনি জ্বালিয়ে গেছেন নিরলসভাবে। ব্যক্তিসীমা অতিক্রম করে সামষ্টিক জগতকে আলোকিত করতে চেয়েছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থ দর্শন কোষ’, ‘সেই সে কাল’, ‘আবক্ষ’, ‘রুশোর স্যোশাল কন্ট্র্যাক্ট’, ‘রুমীর আম্মা’, ‘নূহের কিশতি’ ইত্যাদি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শেরে বাংলা পদক, সাদত আলি আখন্দ পুরস্কার ইত্যাদি। নানা অর্থে বহুমুখী, বর্ণিল, অসামান্য এই মানুষটি ২০১৪ সালের ১৫ জুন প্রয়াত হন।