কথায় আছে, সোনা বাঁকা হলে যায় বাইন্না বাড়ি। আর মেয়ে বিপদে পড়লে ঠাঁই মিলে বাপের বাড়ি। লেখাপড়া করতে চাইছেন, বাপের বাড়ি ভরসা। বাচ্চা হবে, বাপের বাড়ি ভরসা। ঝগড়াঝাটি, দাম্পত্য কলহ, বাপের বাড়ি ভরসা। চাকরি করবেন, বাচ্চা মার কাছে রাখবেন। যতো রকম সমস্যা ঐ বাপের বাড়ি আপনার ভরসার আশ্রয়। খুব কম শ্বশুরবাড়ির সাপোর্ট পেয়ে মেয়েরা লেখাপড়া করে, বাচ্চা জন্ম দেয়, চাকরি করে। অসময়ে শ্বশুরবাড়ির মানুষের সাপোর্ট পায়। আপনি দায়িত্ব যতোই করেন, কথা শুনবেন। হিসাব করা হবে, কতোদিন সংসারে এলেন সেটাও বারবার বলা হবে। শ্বশুরবাড়ির বউ একবেলা ভাতের আদর পেতে গেলে অনেক সৌভাগ্য পেতে হবে, এক গ্লাস শরবতও অনেকের আকাশকুসুম স্বপ্ন। বউতো, নিজে করে খাবেন, আপনাকে কেন এতো আদর করবে, শ্বশুরবাড়ি বলে কথা।
সারাদিন কাজ করছেন, দিনশেষে কিছু নেই। মন যোগাচ্ছেন দিনশেষে কিছু নেই। কিছু তো থাকা উচিত? বলুন। মূল্য না, মূল্যায়ন কোনোটাই নেই। আমাদের সমাজ যতোই বড় বড় কথা বলুক না কেন শ্বশুরবাড়িতে বউদের কখনো মূল্যায়ন করে না। খুব কম শ্বশুরবাড়ির মানুষের মধ্যে এমন দেখা যায়। কিন্তু হওয়া উচিত, সব শ্বশুরবাড়ি যদি পারিবারিকভাবে একটা মেয়ের অসময়ে দায়িত্ব নেয় তাকে মানসিক সাপোর্ট দেয় তাহলে সম্পদ এর অধিকার এর চেয়ে নিরাপত্তার জন্য তাকে নানা দরজায় কষ্ট পেতে হতো না। আমাদের সমাজ শিক্ষিত, মার্জিত কিন্তু মানবিক নয়। আমাদের সমাজপতিরা একগুয়ে, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবে নিয়ম গড়ে নারীকে বারবার অপমানিত করে ও করতে সুযোগ করে দেয়। হিন্দু আইন নিয়ে অনেক পোস্ট ও লেখালেখি দেখছি, শুধু বলব সম্পদ নয় অধিকার জরুরি। যাতে নিজেদের ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরে অন্তত অসময়ে লড়ে যেন জীবনে টিকে থাকা যায়। সবসময় সম্পদ জরুরি নয়, কোনো কোনো সময় অধিকারটা বেশ দরকার। বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ির মানুষের মধ্যে অনেক তফাৎ থেকে যায়, কোনো কোনো পরিবার মানবিক বলেই সমাজে সংসার টিকে থাকে। মানবিক হওয়া জরুরি। কারণ মানুষ নিজেদের বেলায় ষোলআনা ঠিক রাখে, কিন্তু অন্যদের বেলায় একআনাও ভালোবাসা, আন্তরিকতা দিতে কৃপণতা করে। অসময়ে শ্বশুরবাড়ির মানুষের সাপোর্ট কয়জনে পায় জানি না, আমারও অসময়ে বাপের বাড়িই ভরসা ছিলো। অসময়গুলো কখনো ভোলা যায় না। প্রকৃতি নিজের মতো বিচার করুক না করুক আইন জরুরি। নারীদের অসময়ে নিরাপত্তা জরুরি। অসময়ে ঠেলেঠুলে যেন বাপের বাড়ি না পাঠায় অবশ্যই নারীর বউ হিসেবে, মেয়ে হিসেবে একটা অধিকার জরুরি। সম্পদ নয় সম্মান জরুরি। অসময়ে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই জরুরি। কন্যা হোক, বউ হোক। শ্বশুরবাড়ি ও বাপের বাড়ি তার নিরাপদ জায়গা হোক। কন্যাকে কেন নাওরী বলে অতিথি করে দেয় সমাজ। ওটা তার নিজের ঘর। এই অধিকার বাবা মার দেয়া উচিত। শ্বশুরবাড়ির বউ হলেও বলে কয়দিন হলো আসছো? অথচ বিয়ের ষোল বছরেও আপনি নাকি পরিণত নন। এসব নেগেটিভ বিষয় থেকে আমাদের সবাইকে বের হয়ে আসা উচিত। এই তফাৎগুলো সুষ্ঠু সমাধান করা উচিত। আইন হোক নারীর অসময়ে শক্তি। বাপের বাড়ির কন্যার অধিকার হোক অসময়ে। শ্বশুরবাড়ির বউয়ের অধিকার হোক অসময়ে। অসময়ে একটু ভালোবাসা দিন, ভরসা দিন। এটাইতো বড় ধর্ম।