যানজট বাংলাদেশে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি এখন নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা–চট্টগ্রামসহ বেশ কিছু নগরে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নাগরিক জীবনের একটি বড় বিড়ম্বনার বিষয় হলো যানজট। রমজানের ব্যস্ত সময়ে যানজট বেশি থাকে। কিন্তু তার আগেই নগরের সড়কগুলোতে যানজট বেড়ে গেছে। প্রতি বছর রমজান মাসের কয়েকদিন আগে থেকে নগরীর বাসিন্দারা অসহনীয় যানজটের মখোমুখি হন। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। রমজানের শেষ সপ্তাহে বিপণিকেন্দ্রগুলোতে বেচাবিক্রি বেড়ে যাবে। তখন যানজট তীব্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দৈনিক আজাদীতে ২০ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এ বিষয়ে। এতে বলা হয়েছে, নগরীর মার্কেট কেন্দ্রিক যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগের পক্ষ থেকে ৮টি দিক–নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো, মার্কেট কেন্দ্রিক যানজট নিরসনের জন্য রাস্তা ও মার্কেটের সামনে পার্কিং না করা, মার্কেটের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অবশ্যই বিকল্প পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা এবং নিজস্ব পার্কিং প্লেস পূর্ণ হলে তা ডিসপ্লে করা, রাস্তায় কোনো গাড়ি পার্কিং না করা, রমজান মাসে ট্রাফিক পুলিশকে যানজট নিরসনে সহায়তা করার জন্য মার্কেট কমিটি কর্তৃক পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী–ভলান্টিয়ারদের নির্দিষ্ট পোশাক জ্যাকেটসহ নিয়োগ করা, ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক নির্দেশিত রোড ডাইভারসন ব্যবস্থাপনায় মার্কেট সমিতি কর্তৃক প্রয়োজনীয় সহায়তা করা, ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় ও যোগাযোগ করার জন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি নির্ধারণ করা, যেসব মার্কেটের পার্কিং স্থান ব্যবহৃত হয় না সেই সকল পার্কিং স্থান খুলে দেওয়া নিশ্চিত করা এবং মার্কেটের সম্মুখ রাস্তা বা প্রবেশপথ নিজস্ব জনবল দ্বারা পরিষ্কার রাখা এবং আগত যানবাহনের শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে মানুষের সমাগম বেশি থাকবে সেখানে জনবল বাড়ানো হবে। ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতার জন্য মার্কেটের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। অতিরিক্ত ৬০ জন পুলিশ সদস্য চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে ২৯২ জন। রাস্তা ও ফুটপাতের ওপর ইফতারের দোকান বসতে না দেওয়া, বিভিন্ন শপিংমলের সামনে অবৈধ পার্কিং রোধ, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও মলম পার্টির উপদ্রব রোধে কাজ করবে ট্রাফিক পুলিশ। রমজানে নতুন করে কোনো হকারকে রাস্তায় বসতে দেওয়া হবে না। বাইরে থেকে নগরে প্রবেশ করা রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এজন্য চসিকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ওয়াসার সঙ্গে কথা হয়েছে, যেন নতুন করে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি না করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাঝে মাঝে যানজট এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে, অসংখ্য যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে আটকে থাকে। যার ভোগান্তি এককথায় অবর্ণনীয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ঢাকাতেই প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। যার আর্থিক মূল্য বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আর দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সকল শ্রেণিপেশার মানুষ প্রত্যেক অবস্থান থেকে নিজেদের মূল্যবান সময়কে হারিয়ে ফেলে, যা একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলে। সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিদিন শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স যাত্রাকালে এই যানজটের কবলে পড়ছে। উপযুক্ত সময়ে হাসপাতালে না পৌঁছতে পেরে রোগীদের কপালে জোটে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। যানজটের কারণে নগরের রাস্তাগুলোতে দিন দিন ছিনতাইকারীদের ব্যবসা ভালোই জমে উঠেছে। অন্যদিকে যানজটের জন্য প্রতিদিন ৪০ ভাগ বাড়তি জ্বালানি পোড়ানো হয়। যার আর্থিক মূল্য ৪.২ কোটি টাকা। দিনশেষে এটি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
রমজানে যানজট রোধে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে, তার বাস্তবায়ন দরকার। বছর জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার খাদখন্দক এবং ভাঙাচোরা দশা, ফুটপাত তো বটেই এমনকি অনেক জায়গায় মূল সড়ক দখল, যত্রতত্র পার্কিং, ঘন ঘন যানবাহন থামানো, রাস্তায় আবর্জনার স্তূপ ও ময়লা পানি, সরু ও আঁকাবাঁকা পথঘাট প্রভৃতি মিলে যানজট এ নগরীর এক অসহনীয় ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সমন্বিত ও বাস্তবধর্মী কার্যক্রম ছাড়া এ সমস্যার নিরসন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন, যানবাহনের মালিক–চালক, পথচারী ও যাত্রী সবাইকে দায়িত্ব–সচেতন হতে হবে।