চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক ভার্চুয়াল সম্মেলন আজ সকাল ১০টায় উৎসবমুখর পরিবেশে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ২০ বছর পর হতে যাওয়া এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। সম্মেলনস্থলসহ আশপাশের এলাকা এবং নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের মোড়ে আগ্রহী প্রার্থীদের ডিজিটাল ব্যানারে ব্যানারে ছেয়ে গেছে।
এদিকে কে হচ্ছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাণ্ডারী তা নিয়ে সর্বত্র চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। মূলত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই শীর্ষ পদ নিয়েই নগর জুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা। আজ বিকালে অথবা আগামীকাল কেন্দ্র থেকে ঘোষণা হতে পারে ১০১ সদস্যের নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটিকে ঘিরে একাধিক গ্রুপের পক্ষ থেকে চলছে জোর লবিং।
সম্মেলনে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। প্রধান বক্তা থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম. আফজালুর রহমান বাবু।
সম্মেলন স্থলে উপস্থিত থাকবেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী ফারুক আমজাদ খান, ড. জমির সিকদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম আজিম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, পাট ও বস্ত্র বিষয়ক সম্পাদক আশিষ কুমার সিংহ, উপ-পাট ও বস্ত্র বিষয়ক সম্পাদক তারেক মাহমুদ পাপ্পু, উপ-প্রতিবন্ধী বিষয়ক সম্পাদক ডা. উম্মে সালমা মুনমুন, সদস্য বোখারী আজম, জাবেদুল আলম মাসুদ।
সম্মেলনে কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট এ.এইচ.এম জিয়া উদ্দিন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কে.বি.এম শাহজাহান, সদস্য সচিব সালাউদ্দিন আহমেদ অনুরোধ জানিয়েছেন।
সম্মেলন সফল ও সার্থক করতে ইতোমধ্যে ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ১৪টি উপ-পরিষদ। উপ কমিটির নেতৃবৃন্দ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। সম্মেলনে ২৫০ জন কাউন্সিলর ও ২৫০ জন ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও সম্মেলনে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে সরকারের সকল নির্দেশনা পালন করা হবে।
সম্মেলনকে ঘিরে সম্মেলনের স্থলসহ আশেপাশের এলাকা এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ডিজিটাল ব্যানারে-ব্যানারে ছেয়ে গেছে।
দীর্ঘ ২০ বছর পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণার ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ আজাদীকে বলেন, সম্মেলনের উপস্থিত অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেবো আমরা। তবে আপনাদের এইটুকু আশ্বস্ত করতে চাই আমরা একটি শক্তিশালী কমিটি উপহার দেবো-চট্টগ্রামে। যারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের জন্য ত্যাগ করেছেন, দলের জন্য নিবেদিত-পরীক্ষিত তাদেরকেই আমরা সংগঠনে আনবো। ১ হাজার জনের বায়োডাটা দেখে কিভাবে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, আমরা জানি-কারা দলের জন্য ত্যাগী, কারা দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্য। যারাই যোগ্য তাদেরকে আমরা মহানগর কমিটিতে, পররর্তী ধাপে থানা কমিটিতে এবং ওয়ার্ড কমিটিতে স্থান দেবো।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনকে ঘিরে নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদের জন্য ১ হাজারের বেশি নেতাকর্মী বায়োডাটা জমা দিয়েছেন বলে জানান, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে একেবারে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের জন্যেও চলছে ব্যাপক তদ্বির।
এদিকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষপদের জন্য নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের জোর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবাশীষ নাথ দেবু ও লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন আজিজুর রহমান আজিজসহ অনেকেই।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন অনুসারীদের মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন আইন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি সুজিত দাশ, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো: হেলাল উদ্দিন, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বাপ্পী এবং আবদুর রশিদ লোকমান, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন।
এদিকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এ.এইচ.এম. জিয়া উদ্দিনের সাথে দীর্ঘদিন নগরীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মকাণ্ডে নিজেদের সক্রিয় রেখেছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আজাদ খান অভি। এছাড়াও এই গ্রুপে আছেন অ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিন। অপরদিকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কে বিএম শাহজাহান তার অনুসারী দেবাশীষ আচার্য্য, জসীম উদ্দিন ও মনোয়ার জাহান মনিকে শীর্ষ পদে দেখতে চান বলে জানা গেছে। বর্তমান নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২১ সদস্যের কমিটির সদস্য নুরুল কবিরও পদ প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন মাসের জন্য ২১ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা হলেও দীর্ঘ ২০ বছর আর কোনো সম্মেলন হয়নি ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের এই অঙ্গ সংগঠনের।