সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে দুটি গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের মূল বা বাস্তবায়নের অংশ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। সেখানে বলা হয়েছে, এ রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি আগে থাকা অন্যান্য কোটাও বহাল করতে হবে। তবে সরকার চাইলে বিভিন্ন কোটার হার কমাতে, বাড়াতে বা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।
আন্দোলনকারী ও সরকারের তরফে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের যে কথা বলা হচ্ছে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে তার পথ প্রশস্ত হল। রায়ে বলা হয়েছে, কোটা পূরণ না হলে সরকার মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে পারবে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আজকে রায়ের মূল অংশটা, যেটাকে অপারেটিভ অংশ বলে, সেটা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে লক্ষ্যণীয় যে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে যে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছিল সেটা বাতিল করা হযেছে। রায়ে বলা হয়েছে যে, মুক্তিযোদ্ধা, জেলা কোটা, নারী কোটাসহ যারা ট্রাইবাল, তাদের কোটাও থাকবে। তবে একটা ডাইরেকশন দিয়েছে, যদি সরকার পরিবর্তন পরিবর্ধন করতে চায় করতে পারবে।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। এক রিট আবেদনের রায়ে গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট। এরপর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি থাকলেও এ সপ্তাহের শুরু থেকে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি, যার নাম তারা দিয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও এখন তারা মাঠে রয়েছে এক দফা নিয়ে।
তাদের দাবি হল– সব গ্রেডে সব ধরনের ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে। ওই ‘ন্যূনতম পর্যায়’ বলতে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর লোকদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা ‘গ্রহণযোগ্য’ মনে করছে তারা।
আন্দোলনকারীরা গত রবি ও সোমবার বিকালে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর বুধবার সকাল–সন্ধ্যা সারা দেশে তাদের একই কর্মসূচি চলে। তাতে যানজট এবং পরিবহন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।
এই আন্দোলনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বুধবার কোটা নিয়ে স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দেয়।
কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, কোটা নিয়ে এখন কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে।