সন্তানদের আদর্শ করে তুলতে পারিবারিক শিক্ষাই অন্যতম

সুব্রত কুমার নাথ | রবিবার , ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা মানুষের আচরণিক পরিবর্তন ঘটায়। বিশেষত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ পরিপূর্ণ জীবনের অধিকারী হয়ে ওঠে। ব্যাপক অর্থে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, নৈতিক সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশই হলো শিক্ষা। আর এ শিক্ষা অর্জনের আদি বিদ্যাপীঠ হলো পরিবার। পরিবারের মা বাবা সহ বড়দের আচরণের মধ্যে দিয়ে শিশুরা শিক্ষা লাভ করে। বড়দের মান্য করা, ছোটদের স্নেহ করা, বিনয়ী হতে শেখা, সত্যের পথে চলতে শেখা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অর্জন সহ ভদ্রতা, সভ্যতা, কৃতজ্ঞতা বোধ, উদারতা, মানবতা এসব গুণাবলি শিশুরা পরিবার থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে। শিশুরা অল্প বয়সে পরিবার থেকে যা আয়ত্ত করবে তাই তারা তাদের জীবনে প্রয়োগ করবে। এজন্য সন্তানদের শুধু আদেশ নিষেধ অনুরোধ করে নয়, অভিভাবকগণ নিজেরাই মানবীয় আচরণ করে ও নীতি নীতিনৈতিকতার মধ্যে চলে সন্তানদের আদর্শ আচরণ শিখাতে হবে। যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে খুব বেশি আশা করা যায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে শিক্ষিত হওয়া যায়, এমনকি উচ্চতর ডিগ্রিও নেওয়া যায়। কিন্তু নীতিনৈতিকতার সমুদয় গুণ পরিবার থেকেই শিখতে হয়। আর তা যদি শিখতে ব্যর্থ হয় তাহলে উচ্চশিক্ষা অর্জনের কৃতিত্বও ম্লান হয়ে যায়। উচ্চশিক্ষিত হয়েও পরিপূর্ণ মানুষ হতে না পারলে সে জীবনের কোনো মূল্য নেই। সন্তানকে মানুষ করতে হলে মা বাবা সহ পরিবারের বড়রা তাদের সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণের মাধ্যমে ভালো মন্দের দিকগুলো বুঝাতে হবে। শিশুদের গালমন্দ নয়, শুধু আদরস্নেহের মাধ্যমে তাদেরকে যে কোনো বদঅভ্যাস থেকে দূরে রাখতে হবে। আমাদের চারপাশের প্রকৃতি থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। তাই সন্তানদের প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়াও একান্ত প্রয়োজন। এতে যেমন সন্তানেরা বড়দের সাথে প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ পায়, তেমনি শিক্ষা অর্জন সহ বিনোদনও লাভ করতে পারে। বাবামা সন্তানের সাথে কোনওরকম সঙ্কোচ না রেখে আচরণ করতে হবে। তাহলে সে সন্তানও নিঃসঙ্কোচে সবকিছু বলতে পারবে। মা বাবার সাথে সন্তানের দূরত্ব থাকলে সে সন্তান কখনও আদর্শবান হতে পারে না। আবার শুধু ঘরের ভালো পরিবেশের কারণেই যে সন্তান সভ্য ও আদর্শবান হবে তা সবসময় সত্য নয়। সন্তান কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অভিভাবকগণ অবশ্যই তাদের সন্তানদের শিশুবয়স থেকে মানবিকতার চর্চার অনুশীলন করাতে হবে। তবে সে সন্তানেরা কোনোদিন অন্যায় পথে পা বাড়াবে না। শিক্ষিত হওয়ার জন্য যেমন একাডেমিক শিক্ষার প্রয়োজন, তেমনি সন্তানকে সুসন্তান বা পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সততা, মানবিকতা, ধার্মিকতা ও নৈতিকতার যাবতীয় গুণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো সুন্দর মনন গড়ে তুলতে হবে। এক কথায়, বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও আদর্শ বাবামা বা পরিব সন্তানেরাই সমাজে আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারী-ফটিকছড়ি সড়কের অংশে ডিভাইডার নির্মাণ করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধ‘স্বীয় জিহ্বা রাখিব শাসনে’