বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে সত্যেন সেন একজন মননশীল ব্যক্তিত্ব। প্রগতিবাদী সৃজনশীল কথাশিল্পী হিসেবে তিনি যেমন প্রতিষ্ঠিত, তেমনি আধুনিক মানবতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি সমাজ ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। সাংবাদিক ও বিপ্লবী রাজনীতিবিদ হিসেবেও তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল।সত্যেন সেনের জন্ম ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ বিক্রমপুরের সোনারং গ্রামে। স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে তিনি কলকাতায় যান উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে। এখানেই ব্রিটিশ বিরোধী গোপন রাজনৈতিক সংগঠন ‘যুগান্তর দল’-এর সাথে যুক্ত হন সত্যেন। । অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে এসে তাঁর জীবনধারা পাল্টে যায়। পরবর্তী সময়ে তিনি বাম রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী হয়ে ওঠেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা পর্বে সত্যেন সেন প্রায় ১৮ বছর কারাবন্দী ছিলেন। বন্দী অবস্থাতেই পাস করেন বি.এ এবং এম.এ। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলায় এম,এ সত্যেন শান্তি নিকেতনে গবেষণার জন্য বৃত্তি পেয়েছিলেন । কিন্তু মেহনতি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সমাজতন্ত্রের পক্ষে কাজ করার জন্য শান্তি নিকেতনে যোগ না দিয়ে মার্কসবাদে দীক্ষা নেন, ফিরে যান নিজ গ্রাম সোনারঙে। ১৯৩৯ সাল থেকেই সত্যেন সেন নিবেদিত হন কৃষক-আন্দোলন সংগঠনে। ‘প্রগতি লেখক সংঘে’র সাথেও তাঁর নিবিড় সম্পৃক্ততা ছিল। প্রগতিপন্থী বিপ্লবী সত্যেন এ সময়ে বেশ কিছু গণসংগীত রচনা করে তাতে সুরারোপ করেন। বিপ্লবীদের মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত করতো এসব গান । বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও এসব গণসংগীত মুক্তিকামী মানুষকে প্রেরণা জুগিয়েছে। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি ছিলেন তিনি। সাংবাদিকতা করেছেন ‘দৈনিক সংবাদ’-এ। সত্যেন সেন লিখেছেন প্রচুর। এর মধ্যে উপন্যাস: ‘অভিশপ্ত নগরী’, ‘পাপের সন্তান’, ‘পদচিহ্ন’, ‘বিদ্রোহী কৈবর্ত’; ইতিহাস বিষয়ক: ‘প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশের কৃষকের সংগ্রাম’, ‘ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা; জীবনী: ‘মনোরমা মাসীমা’, ‘সীমান্ত সূর্য আবদুল গাফফার; শিশু সাহিত্য: পাতাবাহার’, ‘অভিযাত্রী’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। এছাড়া পেয়েছেন আদমজী পুরস্কার ও একুশে পদক। তাঁর রচনা মার্কসবাদী চেতনা ও গণমানুষের মুক্তির স্বপ্নে সমৃদ্ধ। ১৯৮১ সালের ৫ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনে সত্যেন সেন প্রয়াত হন।