‘ভাই করোনা এখন আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে গেছে। আমরা ভেবেছিলাম আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষ মরে রাস্তায় পড়ে থাকবে। কই কিছুই তো হলো না।’ কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমরান আহমেদ। শুধু ইমরান নয়, দেশের অধিকাংশ মানুষের মন থেকে ওঠে গেছে করোনাভীতি। শুরুর দিকে মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজ করার দিকে মনোযোগ থাকলেও এখন সেটি দেখা যাচ্ছে না। কাঁচা বাজার, শপিং সেন্টার এবং হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি যেনো নিছক কথার কথা। মানুষের বেপরোয়া চলাচলের কারণে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নির্দেশনাটিও রসিকতাতে পরিণত হয়েছে। যদিও সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে মাস্ক না পরায় বেশ কিছু মানুষকে জরিমানাও করা হয়েছে। তারপরেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের সময় এমনিতেই বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়। এই শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। জনগণকে আসলে বারবার সচেতন করার পরও তাদের মধ্যে ন্যূনতম সচেতনতাবোধ আসছে না। অধিকাংশ মানুষ থুতুনির নিচে মাস্ক নামিয়ে রাখছে। আবার অনেকে কানের পাশে মাস্ক ঝুলিয়ে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে। সোজা কথা হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষ সঠিক নিয়মে মাস্ক পরছে না। এতে কিন্তু সংক্রমিত হওয়া এবং অপরজনকে সংক্রমিত করার একটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
গতকাল নগরীর টেরিবাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, রিয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমণ্ডি লেন এবং নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের স্বাভাবিক বিচরণ দেখে বুঝার উপায় নেই, দেশে করোনাভাইরাস নামের কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা দেখা যায়। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাদ দিলে বেশির ভাগ ক্রেতা ও বিক্রেতার মুখে মাস্কই নেই।
রাসেল আহম্মদ নামের একজন ক্রেতার মাস্ক থুতুনিতে পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে অস্বস্তি লাগে। তাই মাঝে মাঝে নামিয়ে রাখি। আপনি দেখেন অনেক লোক একেবারে মাস্কই পরেনি। তাদের আপনি কি বলবেন?
মাস্ক না পড়ার কারণ জানতে চাইলে ইমতিয়াজ উদ্দিন নামে অপর ক্রেতা জানান, মাস্ক ভুলে বাসায় রেখে এসেছি। আমি এমনি নিয়মিত মাস্ক পরি।
নিউ মার্কেটের বিক্রেতা আব্দুল্লাহ আল সুজন জানান, মাস্ক ছাড়া সার্ভিস না দেয়ার নির্দেশনা আছে। আমরা দোকানের বাইরে মাস্ক পরে দোকানে আসার জন্য বলি। প্রথম প্রথম আমরা স্যানিটাইজার স্প্রে করতাম। তবে সম্প্রতি করছি না। এখন কোনো ক্রেতা যদি মাস্ক না পরে আসে, তাকে তো আমরা জোর করে বের করে দিতে পারি না।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার দোকানের কর্মচারীদের পরিস্কার নির্দেশনা দিয়েছি, কোনো ক্রেতা যদি মাস্ক না পরে আসে, তাহলে তার কাছে যেনো পণ্য বিক্রি করা না হয়। এখন পর্যন্ত আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করছি। আগে জীবন তারপরে কিন্তু জীবিকা। তবে এ ব্যাপারে ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে।