গণ আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা করেছেন র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে নিহত এক শিশুর মামা। নিহত মাদ্রাসা ছাত্র জোবাইদ হোসেন ইমনের (১২) মামা আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার ঢাকার হাকিম আদালতে মামলার আবেদন করলে মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী বাদীর জবানবন্দি নিয়ে অভিযোগটি এজাহার হিসাবে গণ্য করার নির্দেশ দেন। প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া চতুর্থ মামলা এটি। খবর বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনাসহ মোট ১৬ জনের নাম রয়েছে এ মামলার আসামির তালিকায়। বাকিরা হলেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের সাবেক মহা–পরিচালক মো. হারুন–অর–রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) খ মহিদ উদ্দিন, ডিবির অতিরিক্ত ডিআইজি হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এছাড়া র্যাবের হেলিকপ্টার টহল টিমের অজ্ঞাতনামা সদস্য এবং তাদের কমান্ডিং অফিসারদেরও আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।
মামলার আবেদনে বলা হয়, জোবাইদ হোসেন ইমন মোহাম্মদপুরের দারুন্নাজাত ইসলামিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময় সেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিক্ষোভে গিয়েছিল। ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়লে একটি গুলি জোবাইদের বাম কানের উপর দিয়ে প্রবেশ করে ডান কানের নিচ দিয়ে চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন জোবাইদকে ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
বাদীর আইনজীবী তারেক আবদুল্লাহ শুনানিতে আদালতকে বলেন, ‘শিশুটিকে স্নাইপার দিয়ে গুলি করা হয়েছে। বাদী বার বার চেষ্টা করলেও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে ভিকটিমের ডেথ সার্টিফিকেট নিতে পারেননি। ফলে এ বিষয়ে থানায় মামলা করা যাচ্ছে না, তাই আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।’
এদিকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে গুলিতে নিহত শাহাবুদ্দিনের (৩৫) বাবা মো. আবুল কালাম গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার হাকিম আদালতে আরেকটি মামলার আবেদন করেন।
তার জবানবন্দি শুনে মহানগর হাকিম ফারাহা দিবা ছন্দা মামলার আর্জি এজাহার হিসাবে গণ্য করতে শেরেবাংলা নগর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি আরো দশজনের নাম রয়েছে এ মামলার আসমির তালিকায়। তারা হলেন– সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. এ আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরো অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলার আরজিতে বলা হয়, গত ৫ অগাস্ট সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে শাহাবুদ্দিন পরিবারের জন্য খাবার কিনতে বাসা থেকে বের হন। পশ্চিম আগারগাঁও চৌরাস্তায় ওঠার সময় পুলিশের ছোড়া গুলি তার মাথায় লাগে। আশপাশের লোকজন তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পঞ্চম মামলা এটি।