শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা প্রায় ৫২ লাখ টাকার নিট ফেব্রিক্স এস এ পরিবহনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে পাচারকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে জব্দ করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের একটি টিম। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ৩৫৬ প্যাকেজে ৮ হাজার ৬১২ কেজি পণ্য জব্দ করা হলেও গতকাল গণমাধ্যমকে প্রেস বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক উত্তম চাকমা। প্রেস বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা টিম ফেব্রিক্স বোঝাই কাভার্ড ভ্যানটি (ঢাকা–মেট্রো–ট–১১–৯১২১) আটক করে পণ্য গণনা করে। গণনা করে ৩৫৬ প্যাকেজে (১২৮টি বস্তা এবং ২২৮ রোল) সাদা, সাদা প্রিন্ট, হলুদ, জলপাই, হালকা বেগুনিসহ ৮টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের ৮ হাজার ৬১২ কেজি নিট ফেব্রিক্স পাওয়া যায়। কিন্তু জব্দকৃত পণ্যের মালিকানা দাবিকারী টেরিবাজারের ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলামের উত্থাপিত কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, গত ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তারিখে চট্টগ্রাম কাস্টমসে অনুষ্ঠিত নিলাম (লট নং–ওবিপিসি–২/২৩৮১/২০, টেন্ডার সেল–২৩/২০২১) এর মাধ্যমে নজরুল ইসলামের কাছে চারকল হেথার রংয়ের ১০ হাজার ৬৯৪ কেজি (৩৫৪ রোল) নাইলন স্প্যান্ডেক্স মিক্স ফেব্রিক্স বিক্রি করে কাস্টমস। নিলামের সেই পণ্যগুলো এমসিসি মেডেন জাহাজে করে গত ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আমদানি করা হয়। কিন্তু জব্দ পণ্যের মধ্যে গত ২০২২ সালের স্টিকারযুক্ত নিট ফেব্রিক্সও পাওয়া যায়। এতে প্রমাণিত হয়, দাবি করা চালানের পণ্যের সাথে আটক চালানের মিল নেই। জব্দকৃত নিট ফেব্রিক্সের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য দাঁড়ায় ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯৯ টাকা। এর সাথে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ হচ্ছে ২৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৮ টাকা।
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, কাভার্ড ভ্যানটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক রাত ৮টা ৪০ মিনিটে কর্ণফুলী থানাধীন চরলক্ষ্যা নামক স্থানে একটি গার্মেন্টস থেকে ফেব্রিক্স লোড করে রাত ৮ টা ৫৯ মিনিটের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাশ হতে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় পৌঁছায়। টোল প্লাজার সিসিটিভি ক্যামরায় ওই কাভার্ড ভ্যানটি রাত ৮টা ৫৯ মিনিটে টোল প্লাজা অতিক্রম করতে দেখা যায়। পরে কাভার্ড ভ্যানটি বহদ্দার হাট ফ্লাইওভার ও আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার হয়ে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় কাজীর দেউড়ি আসে। কাস্টমস গোয়েন্দা দলের উপস্থিতি টের পেয়ে কাভার্ড ভ্যানের চালক কাভার্ড ভ্যানটি এস পরিবহন কাজীর দেউড়ি অফিসে প্রবেশ করান। আটককৃত কাভার্ড ভ্যান চালকের লিখিত বিবৃতি অনুযায়ী পণ্য চালানটি চরলক্ষ্যা নামক স্থানের একটি গার্মেন্টস গুদাম থেকে লোড করা হয়। পণ্য চালানের পরিবহনের পক্ষে চালক কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
এমনকি মূসক চালানও দেখাতে পারেননি। পরবর্তীতে এস এ পরিববহন কর্তৃপক্ষ খাতুনগঞ্জ শাখার বুকিং চালান উপস্থাপন করেন। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, কাভার্ড ভ্যানটি টেরিবাজার থেকে লোড করা হয়নি এবং এস এ পরিবহন খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে বুকিং করা হয়নি। উত্থাপিত এস এ পরিবহন খাতুনগঞ্জ শাখার বুকিং চালান নং–সিটিজি ৫৬৭৩৪৭, তারিখ–২২/০২/২২, শিপার–মো. নজরুল ইসলাম, টেরি বাজার থেকে নারায়ণগঞ্জের রাজীব সাহা বরাবর ৫৫ হাজার টাকা ভাড়া সম্বলিত বুকিং চালান প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে ১৫/১৬ হাজার টাকায় কাভার্ড ভ্যানে পণ্য পরিবহন না করে এস পরিবহনের সার্ভিসের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকায় পরিবহনের বিষয়টি শুধু অস্বাভাবিক নয়, এতে অসৎ উদ্দেশ্য ছিল।
অপরদিকে পণ্য চালান আটকের স্থানে চোরাচালান বিরোধী সরকারি কার্যক্রমে বাধা দানের উদ্দেশ্যে এস এ পরিবহনের কর্মকর্তা–কর্মচারী কর্তৃক কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তা উচ্ছৃক্সখল আচরণ ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি ও মারমুখি হয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়। সে প্রেক্ষিতে চোরাচালানের দায়ে অভিযুক্ত মো. নজরুল ইসলাম গং এবং চোরাচালানে সহযোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ২৬ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালী থানায় একটি ফৌজদারি মামলা (নং–৪৩) দায়ের করা হয়।