বেশ কিছুদিন ধরে সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও হত্যার মত যে ন্যক্কারজনক ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে তা দেশ ও জাতির জন্য অশনিসংকেত। যে কোন সমাজে শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছনা অকল্পনীয় ব্যাপার! কিন্তু আমাদের সমাজে তা আজ বাস্তবতা! এ ধরনের ঘটনা শিক্ষক সমাজকে আতংকিত ও গভীর হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে করেছে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। সমাজের নৈতিক অধঃপতন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে এ চিত্র থেকে তা স্পষ্ট। সময় এসেছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ফাঁক- ফোকর খুঁজে বের করে তা ভরাট করার। অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেয়েও এখন অনেক বেশি জরুরি সুশিক্ষা নিশ্চিত করা। যা ছাত্রছাত্রীদের ভালো শিক্ষার্থী বানানোর আগে ভালো মানুষ বানাবে। শিক্ষার্থীরা এখন কোন ভুল বা অন্যায় করলে শিক্ষকদের শাসন করার নিয়ম নাই। ভক্তি, শ্রদ্ধা, আনুগত্য, ভালোবাসা, শাস্তি নামক শব্দগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রমান্বয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার্থী নয় বরং দিনদিন পরীক্ষার্থীতে পরিণত করছে।পরীক্ষায় এ প্লাস প্রাপ্তি কিংবা ভালো ফল এখানে মূখ্য বিষয়। মানুষ তৈরির শিক্ষা এখানে অনুপস্থিত। যথাযথ পারিবারিক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, বিদ্যাপীঠে নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার ঘাটতি, অপসংস্কৃতির জোয়ার ও প্রযুক্তির অপব্যবহার বর্তমান প্রজন্মকে নিয়ে যাচ্ছে অধঃপতনের অতল তলে। পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সব মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সেইসাথে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছুদিন পরপর কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা উচিত। বর্তমানে যে বিষয়টি বেশি উদ্বেগের তা হল- ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একটি বিশেষ সমপ্রদায়ের শিক্ষককে অপমান করা। কেউ যদি ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধী প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক। কিন্তু ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে কারো গলায় জুতোর মালা পরিয়ে দেয়া, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কখনো সমর্থনযোগ্য নয় । শিক্ষকের অপমান তাঁর একার নয়,পুরো জাতির অপমান। এ ধরনের ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য সমাজের একটি প্রভাবশালী মহল সবসময় ওত পেতে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্যি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় এ অবস্থার রাতারাতি উন্নতি হবে এমনটা আশা করাটা ও বোকামি! সমাজের সর্বক্ষেত্রে আজ গভীর পচন ধরেছে। ক্ষমতা, অথের্র দাপট আর সামপ্রদায়িকতা সবকিছুকে গ্রাস করেছে। ফলে শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছনার মত ন্যক্কারজনক ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ চোখে পড়ে ন।যে জাতি তার শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা দিতে জানে না,সে জাতির ললাটে দুর্গতি ছাড়া আর কিছুই লেখা থাকে না। সম্মান চলে গেলে শিক্ষক আর শিক্ষক থাকেন না। শিক্ষকের আত্নশক্তি ও শিক্ষা প্রদানের সদিচ্ছা যদি একবার মরে যায়,তাহলে দেশ ও জাতিকে ভুগতে হবে যুগের পর যুগ। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছনার মত অশুভ ও ঘৃণ্য অপতৎপরতার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক,যাতে ভবিষ্যতে এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।