গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি প্রমাণিত হওয়ায় সামিয়া রহমানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের শাস্তি নির্ধারণে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। গতকাল বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটের সভায় এই ট্রাইবুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ জানিয়েছেন। আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথ গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির শাস্তি নির্ধারণ করবে এই ট্রাইব্যুনাল। খবর বিডিনিউজের।
অধ্যাপক সামাদ বলেন, এই ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য হবেন বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের একজন প্রতিনিধি ও অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি। শিগগিরই ওই দুই সদস্যের নাম ঠিক করে উপাচার্য ট্রাইব্যুনালকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেবেন। এটি সর্বোচ্চ আট সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। অন্য ট্রাইব্যুনালটির আহ্বায়ক হলেন সিন্ডিকেট সদস্য ও আইনজীবী এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুকের গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির শাস্তি নির্ধারণ করবে এই ট্রাইব্যুনাল। অধ্যাপক সামাদ বলেন, চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের এক সভা থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুকের ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি একাডেমিক কোনো শাস্তি পাননি। এই ট্রাইব্যুনালে তার শাস্তি নির্ধারণ হবে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ নামক আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়।
তবে তা ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিন্ডিকেট। তাই এখন গঠন হল। অধ্যাপক সামাদ বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারে কেউ সন্তুষ্ট না হলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।