চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবনের বর্জ্য যত্রতত্র ছড়ালে জরিমানা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জলাবদ্ধতা ঠেকাতে আমরা শুষ্ক মৌসুমে খাল–নালা থেকে মাটি তুলছি। সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় থাকা খালগুলোর মাটি বর্ষা মৌসুমের পূর্বে তোলার আহ্বান জানাই আমরা। পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে নগরীতে পানি জমলেও দ্রুততম সময়ে সে পানি যাতে অপসারিত হয় সেটিই আমাদের লক্ষ্য। তবে কোনো পদক্ষেপই সফল হবে না, যদি না জনগণ খাল নালায় প্লাস্টিক–পলিথিন ও ময়লা–আবর্জনা ফেলা বন্ধ না করে। আমরা জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করেছি এবং পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করছি। আমরা চাচ্ছি জনগণকে সচেতন করে এতে সম্পৃক্ত করতে। এ মাস থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবনগুলোর ময়লা–আবর্জনা যত্রতত্র ছড়ালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি ও জরিমানা করা হবে। যারা যত্রতত্র ও খাল–নালায় ময়লা আবর্জনা এবং প্লাস্টিক সামগ্রী ফেলবে তাদের চিহ্নিত করতে সিভিল ড্রেসে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ নজরদারির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চসিক ম্যাজিস্ট্রেগণ দোষীদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আসলে নিজস্ব স্থাপনা, বাড়ি, আঙিনা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পানির আধার বিনষ্ট করা এলাকাবাসীর নাগরিক দায়িত্ব। বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণত নাগরিক বলতে কোনো দেশের, নগরের বা শহরের অধিবাসীকে বোঝানো হয়। এর অর্থ ব্যাপকতা অর্থাৎ কোন রাষ্ট্রে বা দেশে বর্তমানে বসবাসরত সকল অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়। সাধারণভাবে প্রত্যেক নাগরিকের কিছু না কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। দায়িত্বশীল নাগরিক বলতে একজন ভালো নাগরিককে বোঝায়। প্রথমত মানুষটাকে সব অর্থে ভালো, সৎ ও দায়িত্ববান; নিজের এবং সপরিবারে, সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপারে হওয়াটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ভালো বা সুনাগরিক তাকেই বলা যায়– যার অন্যের প্রতি যথাযথ সম্মান এবং সুদৃষ্টিবোধ আছে বা থাকে। একজন ভালো নাগরিকের সূচনা বা চর্চা পরিবার ও স্কুল থেকেই শুরু যেমন ক্লাস রুমে নিজের পড়াটা তৈরি করা, শিক্ষক এবং বড়কে শ্রদ্ধা করার বিষয়গুলো যে কেউ তার স্কুল জীবনের শুরুতে চর্চা করার ও বোঝার সুযোগ পায়। দায়িত্বও পায়। অনেকের মতেই একজন মানুষ তার স্কুল জীবনের শুরুতে কেমন আচরণ করে এবং কি শেখে, সেটা নির্ধারণ করে দেয় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তার নাগরিক ভূমিকা কি অথবা কেমন হতে পারে। এ মতের পক্ষে মত বা দ্বিমত যুক্তি, তর্কও আছে। দায়িত্বশীল নাগরিক হঠাৎ করে হওয়া সম্ভব না, এটাও ঠিক। পরিবেশ–পারিপার্শ্বিকতার নানা বিষয়ও একজন দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরির পেছনে ভূমিকা রাখে।
জহিরুল ইসলাম শাহিন তাঁর এক লেখায় বলেছেন, সকল শ্রেণির নাগরিককে সরকারি প্রয়োজনীয় কাজ কর্মে অংশগ্রহণ, দেশের শান্তি–শৃঙ্খলা বিধানে কাজ করা দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কোন দেশের নাগরিক হিসেবে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেশবাসী স্বাভাবিকভাবেই পালন করতে অভ্যস্ত, স্বাধীন দেশের ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব ভিন্ন প্রকৃতির এবং তা জাতীয় জীবনের কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্বাধীন দেশের সমস্যার অন্ত থাকেনা এবং তা তার নাগরিকদের সমাধান করতে হয়। সে জন্য স্বাধীন দেশের নাগরিকদের বেশি পরিমাণ কর্তব্য পরায়ন হওয়ার প্রয়োজন আছে। দায়িত্ব পালনকালে নাগরিকদের অধিকতর কর্তব্য বিষয়ে সচেতন হতে হয়। আমাদের দেশে বর্তমান অগনিত সমস্যা জাতীয় জীবনকে নিপীড়িত করছে। এ সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়, কিছু কিছু দায়িত্ব নাগরিকের উপর বর্তায়। তাই সকল নাগরিককে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হলে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। গঠনমূলক পরিকল্পনা নিয়ে নিজের পরিবারে, নিজের সমাজে, নিজ অঞ্চলে এবং সমগ্র দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে দেশটা আমাদের। আমরা যদি ভাল হই, যদি সৎ হই, দেশ প্রেমিক হই, দেশকে যদি মায়ের মতো ভালোবাসি, নিঃসন্দেহে পৃথিবীর মানচিত্রে এ দেশের নাগরিদের কল্যাণে এ দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে সন্দেহ নেই। আমরা অবশ্যই পারবো যদি দেশের সকল নাগরিক নিজ স্বার্থের কথা না ভেবে আপামর জনসাধারণের কথা ভেবে নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে উজাড় করে শুধু দেশের জন্য এবং দশের জন্য কাজ করতে পারি অবশ্যই দেশে শান্তি আর সুখ ও কল্যাণ ফিরে আসবে। এজন্য সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে, তা পালন করতে হবে।