বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। করোনার ভয় উপেক্ষা করে রেলপথ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। ১২৮ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে দোহাজারী অংশে ১৮টি সেতুর পিয়ার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে গার্ডার ও স্প্যান বসানোর কাজ। তারই অংশ হিসেবে গত রবিবার দোহাজারী শঙ্খনদীর উপর নির্মিত রেলসেতুর উপর প্রথম ইস্পাত গার্ডার বসানো হয় এবং গত বুধবার বিকেলে দ্বিতীয় ইস্পাত গার্ডার বসানো হয়। পাশাপাশি কক্সবাজার অংশের ২০টি সেতুর গার্ডার বসানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে বলে জানা গেছে। দোহাজারীতে রেল সেতুর প্রথম ইস্পাত গার্ডার বসানোর সময় উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প পরিচালক মোঃ মফিজুর রহমান। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, ২০১৭ সালে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলের চুক্তি সম্পাদন হয়। কিন্তু জমি পেতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজও দেরিতে শুরু হয়। এখনো কিছু কিছু জায়গায় সামান্য জটিলতা থাকলেও ২০২২ সালের মধ্যে সারা দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে কক্সবাজারকে যুক্ত করার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। তিনি চলমান কোভিড- ১৯ এর কারণে কাজে বাধার সৃষ্টি না হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের ৫৪% কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষে হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাতায়াত নিরাপদ হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ হবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প।
জানা যায়, এই প্রকল্পকে দুটি লটে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমটি দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয়টি চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের কার্যাদেশ পেয়েছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ২০১৮ সালে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ইতিমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে।
সেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ করে আরো জানা যায়, দোহাজারী অংশের ৪টি বড় সেতুর সবগুলোর এব্যার্টমেন্ট, স্প্যান ও পিয়ার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে শক্সখনদীর ওপর সাঙ্গু সেতুর দৈর্ঘ্য ২৮৭.১৩৫ মিটার, এখানে ৭টি স্প্যান ও ৬টি পিয়ার, লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়ার মাঝামাঝি টংকাবতি সেতুর দৈর্ঘ্য ৮৪.২০ মিটার, এখানে ৪টি স্প্যান ও ৩টি পিয়ার, চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৯২.৬ মিটার, এখানে ১২টি স্প্যান ও ১১টি পিয়ার এবং মাতামুহুরী শাখানদীর উপর মাতারবাড়ী সেতুর দৈর্ঘ্য ২৪৬.৩০ মিটার, এখানে ৬টি স্প্যান ও ৫টি পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে।
জানা যায়, দীর্ঘ সমীক্ষা শেষে ২০১০ সালের জুলাই মাসে এই নতুন রেলপথ স্থাপনের জন্য ডিপিপি অনুমোদন দেয়া হয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থির করা হয়। সেই লক্ষ্যেই দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে।