বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ বিস্তৃত এলাকার কম সৌভাগ্যবান মানুষদের ভাগ্যোন্নয়নে লায়ন সদস্যরা সামর্থের সবটুকু দিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৪ এর গভর্নর লায়ন এম ডি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রামে লায়নিজমের পক্ষ থেকে বহুমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। লায়ন সদস্যরা মানুষ এবং মানবতার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই ধারা যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিনই চট্টগ্রামের সুবিধাবঞ্ছিত মানুষগুলো উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, আমরা হয়তো সবার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবো না। সমাজ পাল্টে দেয়ার মতো কোন কাজও আমরা হয়তো করতে পারি না। তবে আমরা একটি ম্যাসেজ সমাজে দিতে পারি, একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি, যা দেখে সমাজের অন্যান্য বিত্তবানেরাও এগিয়ে আসলে পৃথিবী সবার বাসযোগ্য হবে। তিনি লায়নিজমের আদর্শ অনুসরণ করলে পৃথিবী অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠবে বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেবা সংগঠন লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫–বি ৪’র ২৭তম বার্ষিক জেলা কনভেনশন উপলক্ষ্যে গতকাল দুপুরে লায়ন্স কমপ্লেঙের হালিমা রোকেয়া মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনকালে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। আগামী ৩ ও ৪ মে শুক্র ও শনিবার নগরীর টাইগারপাসের নেভি কনভেনশন হলে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আজ বুধবার বিকেলে ৪টায় নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টার থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে। র্যালিটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে লায়ন্স কমপ্লেক্স–এ গিয়ে শেষ হবে।
লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ বি ৪ এর প্রেস কনফারেন্স কমিটির সদস্য সচিব লায়ন হাসান আকবরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন প্রেস কনফারেন্স কমিটির চেয়ারম্যান লায়ন মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রথম ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন কোহিনুর কামাল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ অপু, কনভেনশন কমিটির চেয়ারম্যান লায়ন মীর্জা আকবর আলী চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন সিরাজুল হক আনসারী, প্রাক্তন গভর্নর লায়ন শাহ আলম বাবুল, কেবিনেট সেক্রেটারি লায়ন আবু বক্কর সিদ্দিকী, কেবিনেট ট্রেজারার লায়ন ইমতিয়াজ ইসলাম, লায়ন এস এম আশরাফুল আলম আরজু, লায়ন জাহাঙ্গীর মিঞা, লায়ন আবু মোরশেদ, লায়ন নিশাত ইমরান, লায়ন এস এম মোরশেদ হোসেন, লায়ন নেছার আহমদ, লায়ন ডা. দেভাশীষ দত্ত, লায়ন ওসমান গণি, লায়ন কামরুজ্জামান লিটন, লায়ন রাজিব সিনহা, লায়ন অশেষ কুমার উকিল, লায়ন শওকত হাসান খান, লায়ন নুরুল আবছার, লায়ন নবিউল হক সুমন, লায়ন মোরশেদ কাদের, লায়ন সাব্বির আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধান অতিথি জেলা গভর্নর এম ডি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির অন্বেষায়’ – আমার এ ডাককে সামনে রেখে গত বছরজুড়ে মানব কল্যাণে আমাদের লায়ন্স সদস্যরা সেবাকর্ম পরিচালনা করেছেন। তিনি বলেন, লায়ন্স জেলা ৩১৫–বি৪ এর ৯৭টি লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে দুই হাজার সাতশ লায়ন সদস্য সেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছেন। লায়ন কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে একটি স্বতন্ত্র লিও জেলা কাজ করছে। লিও জেলায় দুই হাজারের অধিক লিও সদস্য ৪৯টি ক্লাবের মাধ্যমে সেবামূলক কাজে লায়নদের সহযোগিতা করছে।
লায়ন্সের বছর ব্যাপী নানান কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জেলা গভর্নর এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ওয়ান ক্লাব ওয়ান চাইল্ড উদ্যোগের মাধ্যমে ৩১টি ক্লাবে পৃষ্ঠপোষকতায় ৬৯ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত দায়িত্ব নেয়া হয়েছে। অন্ধত্ব নিবারণে বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোগে বিনামূল্যে আড়াই হাজারের বেশী ছানী অপারেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষুধা নিবারণে জেলা ও ক্লাব সমূহের উদ্যোগে সারা বছর উৎসব পার্বনে বিভিন্ন মাদ্রাসা এতিমখানা ও অনাথালয়ের শিক্ষার্থী, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়।
লায়ন্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আই ইনস্টিটিউটে ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে চক্ষু চিকিৎসায় নিজেদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলছে। ধীরে ধীরে আই ইনস্টিটিউট একটি পূর্ণাঙ্গ চক্ষু বিজ্ঞানের অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ এর উপকার ভোগ করবেন। এছাড়া ডায়াবেটিক সচেতনতা ক্যাম্প, শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ, খতনা ক্যাম্প, সাদাছড়ি দিবস উদযাপন, লায়ন্স সেবা পদক, লায়ন্স স্কলারশীপ ট্রাস্ট, লায়ন্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিসহ বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হয় বলেও লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।