রোহিঙ্গাদের জন্য বৈশ্বিক আর্থিক সহায়তা হ্রাস

স্থানীয় শ্রমবাজারে নামতে পারে তারা বাড়তে পারে নানা ধরনের অপরাধ

উখিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২ মার্চ, ২০২৩ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য বৈশ্বিক সহায়তা হ্রাস পেয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ১ মার্চ থেকে তাদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তায় ন্যূনতম ১৭ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডঋচ। এতে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংকট মিটাতে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা স্থানীয় শ্রম বাজার হুমড়ি খেয়ে পড়ার হুমকি দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জরুরি খাদ্য সহায়তায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির চলতি বছরের প্রথম কোয়ার্টারের শেষ মাস চলতি মার্চ মাস। কিন্তু বৈশ্বিক আর্থিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় কোয়ার্টার শেষ না হওয়ার এক মাস আগেই খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়া শুরু করেছে। একদিকে বৈশ্বিক আর্থিক মন্দায় রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদার তুলনায় সহায়তা প্রাপ্তিও অনেকটা কম। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য পণ্যের তুলনামূলক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে বলে জানা যায়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ডঋচ ১ মার্চ থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু খাদ্য সহায়তা বাবদে বর্তমান ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করার ঘোষণা দিয়েছিল। সারা বিশ্বে মহামারী, অর্থনৈতিক মন্দা, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ও নানা সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদার চেয়ে দাতাদের অনুদান অপর্যাপ্ত বলে জানা গেছে।

ডঋচ নূন্যতম খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা মেঠাতে জরুরি অর্থায়নে ১২৫ মিলিয়ন ডলার অনুদানের জন্য দাতাদের নিকট আবেদন জানিয়েছিল। যেখানে বলা হয় এক তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু কম ওজনের ও অপুষ্টিতে ভুগছে। অনেক আগে থেকে অপুষ্টিতে আক্রান্ত রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ ‘বিশাল এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছিল জাতিসংঘ। এরপরও চাহিদার তুলনায় খাদ্য সহায়তা ঘাটতি পূরণে আর্থিক সহায়তার সাড়া মিলছে এক তৃতীয়াংশ।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ও মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের দুই বিশেষ দূত, মাইকেল ফাখরি এবং থমাস অ্যান্ড্রুস, তহবিল ঘাটতির ‘গুরুতর পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন যে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসের আগে খাদ্য সরবরাহ হ্রাস করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যানেটিএআরএসপিএইচ ২১ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে আশ্রিত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহিম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার নিকট বর্তমান মাথাপিছু ১২ ডলার থেকে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২০ ডলার পুনঃনির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু তারা তা না করে উল্টো আরো কমিয়ে দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানুষের প্রধান যে খাদ্যের চাহিদা তা যদি পূরণ করা না যায় তাহলে আশ্রয় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে বৈরি পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।

রোহিঙ্গা একটিভিস্ট ১২ টি সংগঠন গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, অ্যাডমিন খরচ থেকে কমানো হচ্ছে না কেন? অ্যাডমিন খরচ রিফিউজি রেশনের চেয়ে বেশি বলে তারা দাবি করেছে। তারা উদ্বাস্তুদের জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের অনুদান থেকে অপ্রয়োজনীয় খরচ করছে যেমনবিলাসবহুল হোটেলের খরচ, একজনের জন্য এসি গাড়িএক গাড়িতে বেশি লোক কেন নয় এসব দাবি তুলেছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগ মূহুর্তে রোহিঙ্গা রেশন কমিয়ে দেয়া হচ্ছে কেন, তা রোহিঙ্গারা প্রশ্ন তুলছেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক ও উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, এমনিতেই স্থানীয় শ্রমজীবী মানুষের মাঝে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্ষোভ রয়েছে। এখন তাদের খাদ্য সমস্যায় পড়তে হলে, স্থানীয় দরিদ্রদের শ্রম বাজার জবরদখল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, শিশুশ্রম, মানব ও মাদক চোরাচালানসহ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ার আশংকা করেছেন তিনি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, কাজের সন্ধানে আরও মরিয়া হয়ে উঠতে পারে রোহিঙ্গারা। তারা তাদের আয়ের পরিপূরক হিসাবে বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে চলে যেতে পারে। কারণ মানুষের প্রধান চাহিদা খাদ্য ও পুষ্টি। বাংলাদেশের আশ্রয় ক্যাম্পে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তিনি বলেন, এতে স্থানীয় আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর সাথে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিরোধ বাড়তে পারে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দাতারা রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদা অনুপাতে সহায়তার পরিমাণ হ্রাসের পিছনে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, সমপ্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প, করোনা মহামারীসহ নানা বৈশ্বিক সংকটের কথা জানান বলে শরণার্থী কমিশনার জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক মালানের কাছে হার বাংলাদেশের
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ৮ বছর পর বেদখল হওয়া কয়েক কোটি টাকার সম্পদ ফিরে পেলেন মালিক