এক মালানের কাছে হার বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২ মার্চ, ২০২৩ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ মোকাবেলায় বাংলাদেশের জয় মাত্র ৪টি। সবশেষ জয়টি এসেছে সেই ২০১৬ সালে। তাই এবারে সুযোগ ছিল ইংলিশদের হারানোর। কিন্তু বাগে পেয়েও হারানো গেলনা ইংলিশদের। তবে হারানো গেলনা না বলে একজন ডেভিড মালান একাই বাংলাদেশের কাছ থেকে জয়টা কেড়ে নিল বললে ভুল হবে না। ডেভিড মালানের অপরাজিত সেঞ্চুরির উপর ভর করে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের ৩ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড।

অথচ মাত্র ২০৯ রানের পুঁজি নিয়ে দারুণভাবে লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু একজন মালানের সাথে আর পেরে উঠলনা টাইগাররা। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ১০ তে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। ব্যাটিংটা মোটেও ভাল হয়নি বাংলাদেশের। কিন্তু বোলাররা ঠিকই চেপে ধরেছিল ইংলিশ ব্যাটারদের। বিশেষ করে স্পিনাররা যেন বন্দী করে রেখেছিল বিশ্বজয়ী ইংলিশদের। কিন্তু তার মাঝেও একজন ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি ডেভিড মালান। তাকে ফেরানো গেল না।

তাতে ম্যাচটাও জেতা হলোনা। অথচ এই ম্যাচটি মালানের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ বাংলাদেশের মাটিতে। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেট এবং বিপিএলে বেশ লম্বা সময় ধরে খেলছেন এই ইংলিশ ব্যাটার। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচের অভিষেকেই বাজিমাত করলেন মালান। বনে গেলেন জয়ের নায়ক। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুটা ভাল করেছে তেমনটি বলা যাবে না। ৩৩ রানের মাথায় ৭ রান করে ফিরেন লিটন দাশ। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও শান্ত শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার কাজটা ভালই করছিলেন। কিন্তু জুটিটা বড় করতে পারলেন না। ৫১ রানের মাথায় মার্ক উডের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন ৩২ বলে ২৩ রান করা তামিম। শান্ত এবার সঙ্গী হিসেবে পান মুশফিকুর রহিমকে। আরেকটি সম্ভাবনাময় জুটি গড়ে ওঠে। কিন্তু সেটিও সেই চল্লিশের ঘরে গিয়ে আঠকে গেল। আদিল রশিদের বলে স্পিনের বিপক্ষে সুইপ করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দেন তিনি মিড উইকেটে।

৩৪ বল খেলে মুশফিক করেন ১৬ রান। তবে পরের ধাক্কাটা সবচাইতে বড় ছিল বাংলাদেশের জন্য। এবার বাংলাদেশ হারাল সাকিবকে। ৮ রান করা সাকিব বোল্ড হলেন মঈন আলির বলে। ১০৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর টাইগাররা পেল প্রথম অর্ধশত রানের জুটি। ৫৩ রান যোগ করেন শান্ত এবং মাহমুদউল্লাহ। এবার ফিরলেন দারুণ লড়াই করা শান্ত। বিপিএলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন এই ব্যাটার ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও। ৬৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করা শান্ত ফিরলেন ৮২ বলে ৫৮ রান করে। ৩ রান পর পরের ওভারে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহও। এই দুজনের জুটিতে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ পিছিয়ে যেতে থাকে ক্রমশ। মাহমুদউল্লাহ যখন ৪৮ বলে ৩১ রান করে ফিরেন তখন বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১৬২। আফিফ এবং মিরাজ দুজই ব্যর্থ হলেন। ১৮২ রানে ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দল দুইশ ছাড়াতে পারে তাসকিন ও তাইজুলের সৌজন্যে। তবে শেষ পর্যন্ত ১৬ বল আগেই ২০৯ রানে থামে বাংলাদেশ। তাসকিন ১৪ এবং তাইজুল করেন ১০ রান। ইংলিশদের ছয় বোলারের সবাই উইকেট নিয়েছেন। বলা যায় ইংল্যান্ডের পেসস্পিনের যৌথ আক্রমণ ছিল সফল। ৩ পেসার মিলে নিয়েছেন ৫ উইকেট আর ৩ স্পিনার মিলে নিয়েছেন ৫টি।

ইংল্যান্ডের রান তাড়ার শুরতেই ধাক্কা দেন সাকিব। প্রথম ওভারেই তিনি ফেরান জেসন রয়কে। এরপর ফিল সল্ট চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলেও তাকে সফল হতে দেননি তাইজুল। ১২ রান করা সল্টকে বোল্ড করেন তাইজুল। এই স্পিনার বেশিক্ষণ টিকতে দেননি জেমস ভিন্সকেও। তবে মালান অবশ্য একপ্রান্ত আগলে রাখার পাশাপাশি রানের চাকা সচল রাখেন। আরেক প্রান্তে জস বাটলারকেও দ্রুত ফেরায় বাংলাদেশ। তাসকিনকে আক্রমণে এনে প্রথম ওভারেই বাটলারকে ফেরায় টাইগাররা। ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড যখন চাপে তখন ডেভিড মালান দুটি জুটি গড়েন উইল জেকস এবং মঈন আলিকে নিয়ে। দুটি জুটিই ৩৮ রানের। দুটি জুটিই ভাঙ্গেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু যাবে ভাঙ্গার তাকে ভাঙতে পারেনি স্বাগতিক বোলাররা। সেই মালানই জয় কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশের কাছ থেকে। জেকস ফিরেছেন ২৬ রানে আর মঈন আলি ফিরেছেন ১৪ রানে। তাইজুলের আঘাতে ক্রিস ওকস যখন ফিরেন তখনো বাংলাদেশ ম্যাচে ছিল। তখনো ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখছিল তামিমরা। কিন্তু ডেভিড মালান সেটা আর হতে দেয়নি। আদিল রশিদকে নিয়ে বলতে একেবারে নিরাপদে জয়ের বন্দরে নোঙর করেন মালান। এই জুটিটা ৫১ রানের। যেখানে আদিল রশিদের অবদান ১৭। বাকিটা মালানের। ১৪৫ বলে ৮টি চার এবং ৫টি ছক্কায় ১১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ডেভিড মালান। সে সুবাধে ম্যাচ সেরার পুরষ্কারও জিতে নেন এই ইংলিশ ব্যাটার। বাংলাদেশের পক্ষে তাইজুল ৩টি এবং মিরাজ নেন ২টি উইকেট। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘আশ্বাসের ৩০ বছর’ পর লিচুবাগান ফেরীঘাটে নির্মিত হচ্ছে সেতু
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গাদের জন্য বৈশ্বিক আর্থিক সহায়তা হ্রাস