কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর একসঙ্গে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, ‘নতুন এই সেতুর দৃশ্যমান কাজ আগামী জানুয়ারি-মার্চের মধ্যে শুরু হবে। ২০২২ সালের মধ্যে কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন হবে। সেতুর ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর সাথে আলোচনা করে উচ্চতা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন ও সেতুর ডিজাইন ফাইনাল করা হবে। ইতোমধ্যে স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে।’ গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় কালুরঘাটে কর্ণফুলীর উপর নতুন সেতু (রেল কাম সড়ক) নির্মাণের স্থান পরিদর্শন শেষে সেতুর বোয়ালখালী প্রান্তে আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতেই রেলমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নদী কর্ণফুলী। এই নদীর উপর রেল কাম সড়ক সেতু বাস্তবায়নের জন্য আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এজন্য পর্যবেক্ষণে এসেছি। এর মধ্যে সেতুটি রেল কাম সড়ক সেতু করার জন্য মানুষের যে দাবি, তা শীঘ্রই পূরণ হচ্ছে। দুইলেনের সড়কটি হবে প্রায় ১৯ মিটার চওড়া। একদিক দিয়ে গাড়ি যাবে, অন্যদিক দিয়ে আসবে। আর অর্ধেক অংশে থাকবে রেল সড়ক।
নূরুল ইসলাম বলেন, সেতুটি আগেই নির্মাণ করা যেত। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির কারণে সেতু নির্মাণে দেরি হয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই প্রধানমন্ত্রী আমাকে সেতুটি রেল কাম সড়ক সেতু করতে নির্দেশ দেন। পরে সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে কোরিয়ার প্রকৌশলী টিমের সঙ্গে আমি কথা বলি। কিন্তু তারা পরিদর্শনে এসে প্রথমে সেতুটি করবে বললেও পরে প্রকল্প থেকে সরে যায়। একপর্যায়ে আমি আবারও বৈঠকে বসলে তারা জানায়, রেলসেতু ও সড়ক সেতু আলাদা করতে হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোরিয়ার প্রস্তাবটি উপস্থাপন করি। তখন প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের নির্দেশ দেন।’
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সড়ক কাম রেল সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া গেছে। ফলে সেতু নির্মাণে সকল মতভিন্নতা দূর হয়েছে। বোয়ালখালীর প্রয়াত সাংসদ বাদল এই সেতু নির্মাণে সংসদে কথা বলেছিলেন। এখন বর্তমান সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ তৎপর রয়েছেন। তাই সরেজমিন পরিদর্শনে আসলাম। কোরিয়ান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ডের সাথে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা চলছে। সব কিছু ঠিক করা হয়েছে।’
রেলমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কঙবাজার পর্যন্ত সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপনের জন্য এই সেতু অত্যন্ত জরুরি। ২০২২ সালের মধ্যে কঙবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালু হবে। এজন্য এই সময়সীমার মধ্যে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের কাজও শেষ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর উপর দুইলেনের সড়ক হবে। এছাড়া ডুয়েলগেজের রেললাইন হবে। এই সেতু নির্মাণ হলে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমারের মধ্যে আন্তঃসড়ক সংযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।’
বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান, বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন।
এসময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব কুমার ঘোষ, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম সরদার সাহাদাত আলী, প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম বাবুল, আওয়ামী লীগ নেতা মো. জহিরুল আলম, ওয়াসীমুল হক, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম. বোরহান উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পথসভা শেষে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন নতুন সেতুর ডিজাইন নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করেন। এসময় জানানো হয়, বর্তমান সেতুটির ৮০ মিটার উত্তরে ৯টি স্প্যান দিয়ে এ সেতু নির্মাণ করা হবে। সেতুটিতে নৌযান চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চতা ও স্পেস রাখা হবে। ফলে সেতুর নিচ দিয়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না। সেতুটি নির্মিত হলে নিরবচ্ছিন্ন রেল পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা যাবে। চট্টগ্রাম-কঙবাজার করিডোরের অপারেশনাল প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য বৃহত্তর করিডোর তৈরি ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়া চট্টগ্রামের যানজট হ্রাস, আঞ্চলিক বিনিময় সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমানের আরো উন্নত হবে বলে জানানো হয়।