খাগড়াছড়ির রামগড় প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে ১১টি পদের মধ্যে ৭টিই শূন্য। এর মাঝে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নেই কোনো জনবল। সেবার অভাবে এই এলাকায় গবাদি পশু–পাখির খামারের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায়। খামারিরা যেমন সেবা পাচ্ছেন না তেমনি প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে উপজেলার এই প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালটির কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ছে।
রামগড় উপজেলা প্রাণী সম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালের ১১ পদের ৭টি পদই শূন্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি সার্জন, কৃত্রিম প্রজনন কর্মী (এফ এ/এ আই), ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার, অফিস সহকারী এবং অফিস সহায়ক পদে কোনো জনবল নেই। মাত্র ৩ জন উপ সহকারী কর্মকর্তা এবং ১জন ড্রেসার দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এবং ভেটেরেনারি সার্জন পদ শূন্য থাকলেও সাড়ে তিন বছর ধরে হাসপাতালে এফ এ/এ আই পদ শূন্য। পাশের মানিকছড়ি উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে মাঝে মাঝে রামগড় আসেন।
উপজেলায় বর্তমানে মুরগির খামার রয়েছে ৩০টি এবং গরুর খামার রয়েছে মাত্র ৫টি। তবে কোনো ছাগল কিংবা পাখির খামার নেই। পারিবারিকভাবে পালন করা গরুর সংখ্যা ১০হাজার, ছাগল সাড়ে ৪হাজার, মহিষের সংখ্যা ১০০ এবং ভেড়ার সংখ্যা ১২০টি। অন্যদিকে মুরগির সংখ্যা ২০ হাজার এবং হাঁসের সংখ্যা ২ হাজার।
সরেজমিনে রামগড় প্রাণী সম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এক প্রকার জনবল শূন্য অবস্থায় রয়েছে হাসপাতালটি। দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালে থাকলেও কোনো খামারিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসতে দেখা যায়নি। তাছাড়া সংস্কারের অভাবে হাসপাতালের উত্তর পাশের বাউন্ডারি ওয়ালটি ভেঙ্গে পড়েছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে বাঁশ, লাঠি দিয়ে ঠেসে রাখা হয়েছে।
রামগড় উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতালের উপ সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক পদও শূন্য। তাছাড়া এখন হাতুড়ে চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা হাসপাতালে কম আসেন। হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে তারা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।’
সাত বছর ধরে খামার করে বর্তমানে খামার বন্ধ করে দেওয়া মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ভেটেরিনারি হাসপাতালে মুরগির চিকিৎসা এবং ভেকসিন পাওয়া যায় কিনা আমার জানা নেই। বাজার থেকে উচ্চ দামে কিনতে হয় ভ্যাকসিন। আর হাসপাতালটি ‘নিজেই
অসুস্থ’ জানিয়ে তিনি বলেন, জনবল শূন্য
হাসপাতালটিকে কার্যকর করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তিনি আরো জানান, অনেক সময় এমন হয়েছে সামান্য অসুখে চিকিৎসার অভাবে খামারের সব মুরগি ১–২দিনের ব্যবধানে মারা গেছে।
উপজেলার বলিপাড়া এলাকার গরুর খামারি বাবলু বলেন, ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে কখনো কোনো সহায়তা পাইনি। গরুর কোনো ধরনের সমস্যা হলে পরিচিত স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করাই।
রামগড়ে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মানিকছড়ি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল জানান, তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে মাসে কয়েকবার রামগড় প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে যান। রামগড় পশু হাসপাতালের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। জনবলের যথেষ্ট অভাব। পুরো হাসপাতালের সংস্কার করা উচিত। হাসপাতালের গাইড ওয়ালটিও ভেঙ্গে পড়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জওহর লাল চাকমা বলেন, পুরো জেলার অবস্থাই ভয়াবহ। অধিকাংশ হাসপাতালেই জনবল সংকট। যার ফলে চিকিৎসা সেবা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের নিয়ে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি। বাৎসরিক আমাদের যে পরিমাণ ওষুধের প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক কম ওষুধ পাই। এমন পরিমাণ ওষুধ পাই যা দু–চারটি পশুর চিকিৎসা দেওয়া যায়। তিনি আরো জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। দ্রুত সংকট কেটে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।