অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, বাজেট নিয়ে আমাদের কাছে অনেক প্রস্তাবনা এসেছে। কিন্তু আমরা অনেকক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করতে পারব না। কারণ আমাদের ওপর রাজস্ব আহরণের চাপ আছে। সরকারকে আমাদের বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য অর্থের যোগান দিতে হচ্ছে। আমাদের সামনে রয়েছে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতার জায়গা তৈরি করতে হবে। এজন্য যুগোপযোগী শিল্পায়ন যেমন করতে হবে, তেমনি বাড়াতে হবে করের আওতাও।
গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চট্টগ্রাম চেম্বারে আয়োজিত ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরের প্রাক–বাজেট মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আপনারা (ব্যবসায়ীরা) সবসময় গ্রামাঞ্চলে করের আওতা বাড়ানোর কথা বলেন। এখন কথা হচ্ছে, আমাদের যে জনবল আছে তা দিয়ে ঢাকা শহর কিংবা চট্টগ্রাম শহরের সব লোকজনকে করের আওতা আনতে পেরেছি কিনা। তবে আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। সীমিত জনবল দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, হোল্ডিং নম্বর ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে কর আদায়ের চেষ্টা করছি। কর দিতে সক্ষম মানুষের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সেই হারে করদাতা বাড়ছে। এখন ৩১ লাখে উন্নীত হয়েছে করদাতার সংখ্যা। রিটার্ন সহজ করছি। ৪ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হয়েছে ভ্যাটদাতার সংখ্যা। লবণ চাষে হাই টেকনোলজি দরকার। লবণ মাঠে পলিথিন ব্যবহারে মান ও উৎপাদন বাড়ছে। বিজিএমইএ ডাইভারসিফাই প্রডাক্ট তৈরির চিন্তা করছে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা এত পোশাক রপ্তানি করি আমাদের একটি নিজস্ব ব্রান্ড হলো না কেন। গবেষণায় অর্থ ব্যয় করতে হবে। ব্রান্ডিংয়ের চেষ্টা করতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো– পণ্য আমদানিতে ভুল এইচএস কোডের বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। শিগগিরই এই নিয়ে একটি জারি আদেশ হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় বাজেট সাজানো দরকার। বর্তমানে আমরা যে সকল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি তা হ্রাস করা এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি যারা রাজস্ব যোগান দেয় তাদের সুযোগ সুবিধা মাথায় রেখে ভ্যাট, শুল্ক ও ট্যাঙ বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে কর সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং এরচেয়ে বেশি হলে ২৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করি। এছাড়া ইন্টিগ্রেটেড ট্যাঙ এডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম প্রবর্তন, অগ্রিম কর বা অগ্রিম ভ্যাট সমন্বয় করে দ্রুত রিফান্ড করা, এইচএস কোড সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম শুল্ক জরিমানা এবং সময়ক্ষেপনের জটিলতা দূর করা প্রয়োজন।
এনবিআর সদস্য (কাস্টমস নীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন, ঢাকার বাইরে সবচেয়ে ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব চট্টগ্রামে পেয়েছি। আয় বাড়লে এনবিআর চিন্তা করবে ভ্যাট কমানো যায় কিনা। ব্যবসা–বাণিজ্য সহজ ও বাধাহীন করতে আমরা চেষ্টা করছি। এনবিআর সদস্য (কর নীতি) ড. শামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, করযোগ্য সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব এনবিআরের বিবেচনায় আছে। ইতিমধ্যে রিফান্ড দ্রুত দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন চেয়ারম্যান। নোটিশ অনলাইনে দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক আকারে করা হবে। কর দেওয়ার সংস্কৃতি বাড়াতে হবে। নিজস্ব তাগিদ অনুভব করতে হবে। এখন কর প্রশাসন অনেক গতিশীল, ডিজিটাল। এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া সুলতানা বলেন, বাজেট তৈরির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে মতামত নেওয়া হচ্ছে। আইন ব্যবসার গতি প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে সংযোজন বিয়োজন করা হয়। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। ভ্যাট আদায়ে তিন লাখ ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রাক বাজেট মতবিনিময়ে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বার সহ–সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, পরিচালক এ কে এম. আকতার হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. রকিবুর রহমান টুটুল, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ–সভাপতি আবিদা মোস্তফা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।