এগিয়ে আসছে রাউজান পৌরসভা নির্বাচন। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান সরকার দলীয় চার নেতা। বিএনপির টিকিটে লড়তে চান ২ প্রার্থী, আর জাপার টিকিটে নির্বাচন করতে চান ১ প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের টিকিটে যারা লড়তে চান তারা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ চড়াচ্ছেন, ঘন ঘন ঢাকায় আসা যাওয়া করে লবিং করছেন। তবে প্রার্থী হওয়া নিয়ে দৌঁড়ঝাপ দেখা না গেলেও বর্তমান মেয়র দেবাশীষ পালিত বলেছেন, নেত্রী আমার অতীত বর্তমান সব বিষয়ে ভাল জানেন। নেত্রীর নির্দেশ পেলে মেয়র পদে নির্বাচন করবো। পৌরসভার দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ এবার সম্ভাব্য জোরালো প্রার্থী। গত কয়েক মাস ধরে তিনি নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের দাবি পারভেজ স্থানীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও দলের তৃনমূল নেতৃবৃন্দ সমর্থিত দলের মেয়র প্রার্থী। দলের বর্ধিত সভা করে তার নাম জেলা কমিটির কাছে একক প্রার্থী হিসাবে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার জন্য জোর লবিং করছেন গত নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনী মাঠের আলোচিত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী রানা। অপরজন ছাত্র ও যুবলীগের সাবেক নেতা ইয়াছিন মাহমুদ।
জমির উদ্দিন পারভেজ বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে তিনি পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসমাবেশ করেছেন। এলাকায় বিভিন্ন সেবামূলক কর্মসূচি নিয়ে পৌর নাগরিকদের ঘরে ঘরে গিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার পক্ষে পৌরবাসীর সম্মতি আদায় করেছেন। দলের জন্য মাঠে আছি, ত্যাগ স্বীকার করছি, এলাকার সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর সাথে থেকে করোনাকালে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রান দিয়েছি। করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করেছি। এখনো রাউজানবাসীর কল্যানে জীবন বাজি রেখে কাজ করে চলেছি। শিক্ষা ও বৃক্ষরোপনে দেশ সেরা স্বীকৃতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তিনবার জাতীয় পুরষ্কার নিয়েছি। আমার এখন লক্ষ্য নৌকা প্রতীক নিয়ে রাউজান পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন করা। পৌরসভার উন্নয়নে অবদান রাখা।
নৌকা প্রতীক পাওয়ার দৌঁড়ে থাকা অপর সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী রানা। তিনি রাউজান উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সভাপতি ও সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির মাঠে থাকতে গিয়ে বিএনপি-জামাত-এনডিপি ক্যাডারদের হাতে হামলা মামলার শিকার হয়েছিলেন বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানান। নাগরিকদের কল্যাণ ও সুখে দুখে পাশে ছিলেন বলেও দাবি করেন তারা। আওয়ামীলীগের এই নেতা বিগত নির্বাচনে দলের তৃনমুল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে তাকে দলীয় প্রতীক না দেয়ায় নির্বাচন থেকে শেষ মুর্হুতে সরে দাঁড়াতে হয়। এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় তিনি জেলা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে জোর লবিং করছেন। এই নেতার দাবি গত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের নির্দেশ মেনে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনার মাঝেও প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এবার তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করতে সব প্রস্তুতি নিয়ে আছেন। তার আশা দলের নীতি নির্ধারকগণ নৌকা প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ দেবেন।
মেয়র পদে দলীয় প্রতিকে নির্বাচন করতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ইয়াছিন মাহমুদ। তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে লবিং শুরু করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। নৌকা প্রতীক পাওয়ার ব্যাপারে তিনি জোর আশাবাদী।
বিএনপির ২ প্রার্থী :
অন্যদিকে এই পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে একরকম নীরবই আছেন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ। অবশ্য এখানে বিএনপি, জামাতের কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই বহুবছর ধরে। খবর নিয়ে জানা যায় বিএনপির রাজনীতি রাউজানে দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে আছে ৯৬ সাল থেকে। ওই সময় থেকে দুটি গ্রুপ পৃথক কমিটি ঘোষনা দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে আসছে। যদিও কোনো গ্রুপের তৎপরতা এখন রাউজানে নেই। দ্বিদ্বাবিভক্ত এই রাজনৈতিক দলের এক গ্রুপের নিয়ন্ত্রন যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের হাতে, অন্য গ্রুপটি নিয়ন্ত্রন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক রাস্ট্রদুত গোলাম আকবর খোন্দকার। গত ২০০৯ সালে পৌরসভা নির্বাচনে রাউজানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির উত্তর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হাসান। স্থানীয় জনসাধারণের মতে ওই নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ার সুযোগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার দলীয় প্রতীকে লড়তে চান এমন দুইজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এদর মধ্যে একজন বিএনপির গোলাম আকবর খোন্দকার গ্রুপের নেতা সেকান্দর হোসেন চৌধুরী। তিনি আজাদীকে জানিয়েছেন, এবার তিনি মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সাবেক ছাত্রদল নেতা সাবের সুলতান কাজলও এবার মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে আজাদীকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। অর্ধশত রাজনৈতিক মামলার বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি। তাই দলের মনোনয়ন চাইবো। আশা করি দল মূল্যায়ন করবে।
জাতীয় পার্টি :
জাতীয় পাটির নেতা পৌরসভায় বিলুপ্ত সুলতানপর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাউদ্দিন আকবরও দলের প্রতীকে প্রার্থী হবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।