মহাকালের মহানায়ক হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সশস্ত্র মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল ১৬ ডিসেম্বর প্রায় একানব্বই হাজার পাকিস্তান সেনা বাহিনীর দানব সদস্যদের আত্নসমর্পণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত আমাদের স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বাঙালির স্বাধীকার ও স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রাম- ‘অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, অত্যাচার, নিপীড়ন- নির্যাতন, গণমানুষের রক্তক্ষরণ ও মুমূর্ষ নর-নারীর আর্তনাদের করুণ ইতিহাস।’ দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন যে, ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে পেয়েছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এক ক্ষত-বিক্ষত ধ্বংসযজ্ঞের অবশিষ্ট দেশ-মাটি ও মানুষ। তীব্র খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান সংকট, কলকারখানায় শূন্য উৎপাদন, পরিপূর্ণ বিপর্যস্ত সকল পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসনসহ বহুমুখী সমস্যার ক্ষুধিত কাঠিন্যে পর্যুদস্ত স্বদেশ পুনর্গঠনে দেশোদ্ধার ব্রতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় পুরো জাতি ঝাপিয়ে পড়ে। এই পরিক্রমায় ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদে ইস্তফা দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তাঁর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার মূলমন্ত্র ছিল শোষণমুক্ত জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এরই আলোকে ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ অক্ষুন্ন রেখে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ঠিক পরের দিন রমনা রেসকোর্স ময়দানকে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে নামাকরণের ঘোষণা এবং সরকারি আদেশে মদ, জুয়া, হাউজিসহ ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেন। ১৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের হাইকোর্ট অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে হাইকোর্ট গঠন করেন। দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২১ জানুয়ারি ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেন। ২৪ জানুয়ারি পাক-সামরিক জান্তাদের সহযোগী হয়ে এদেশে যারা মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী অপরাধকর্মে জড়িত বা দালালী করেছে, তাদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি মুক্তি ও মুজিব বাহিনীর সকল সদস্যবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর নিকট তাঁদের রক্ষিত অস্ত্র সমর্পণ করে বিশ্ব ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১৫ ফেব্রুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শোষণমুক্ত সোনার বাংলা কায়েমই আমাদের লক্ষ্য’। বঙ্গবন্ধুর ৫৩তম জন্মদিন অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনন্দিত গণতন্ত্রের ভারতকন্যা প্রয়াত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে ঢাকায় আসেন এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫ বছরের জন্য শান্তি, সহযোগিতা ও মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২৬ মার্চ দেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন এবং সকল ব্যাংক, বীমা ও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ঘোষিত হয়। ৮ মে সারা দেশে কবিগুরুর জন্মদিন যথাযথ মর্যাদায় পালন এবং ২৪ মে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে ঢাকায় নিয়ে এসে বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিবারকে একটি ভবন ও রাষ্ট্রীয় ভাতা মঞ্জুর করে ২৫ মে এই বিদ্রোহ কবির উপস্থিতিতে অত্যন্ত আড়ম্বর পরিবেশে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়।
৯ এপ্রিল ১৯৭২ স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘হঠাৎ স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় নাই। স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে অনেক দিন পূর্বে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তাদের জীবনভর উজানে নৌকা বাইতে হয়েছে। কোনদিন তারা ভাটিতে নৌকা বাইতে পারে নাই কয়েক মাস ছাড়া। আওয়ামী লীগ কর্মীদের ত্যাগ, তিতিক্ষার ইতিহাস স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে। এই জন্যই এখন লেখা থাকবে যে, আজ বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। লেখা থাকবে, হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ শহীদ ভাইয়ের ইতিহাস, যারা শহীদ হয়েছে স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য। কর্তব্য রয়েছে দেশবাসীর, কর্তব্য রয়েছে আওয়ামী লীগ কর্মীদের। স্বাধীনতা পাওয়া যেমন কষ্টকর স্বাধীনতা রক্ষা করা তেমনি কষ্টকর।’
জাতি বিস্মৃত নয় যে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর একাত্না দর্শন বিশ্বে সমাদৃত। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে চরম অর্থনৈতিক নাজুক অবস্থায়ও বঙ্গবন্ধু বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণে বলেন, ‘নীতিগত প্রশ্নে সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওপর জবরদস্তি কিছু চাপিয়ে দেয়া চলবে না। দেশের এই মুহুর্তের অবস্থা যাই হোক না কেন-দেশের স্বার্থেই স্বাধীন ভূমিকার কোনো হেরফের হবে না। আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ কর্মশক্তিতে বলিয়ান- দেশকে গড়ে তুলতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। আমাদের প্রত্যেকের আছে দুটি বাহু। আমাদের বাহুর সাহায্যে প্রকৃতির অকৃপণ দান উর্বর মাটি থেকে আমরা আমাদের গ্রাসাচ্ছাদন যুগিয়ে নিতে পারব। দাতামহল দাবি না ছাড়লে আগামীকালই তারা চলে যেতে পারেন। আমরা সাহায্য নেব না। ওইসব শর্তে আমরা সাহায্য নিতে পারি না।’ গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন নবোন্মেষ পরমাত্মা তবে সংযমিত কন্ঠে সাবধান করেছেন গণতন্ত্রকে যেন উচ্ছৃঙ্খলতার মোড়কে কলুষিত করা না হয়।
দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় উপাদান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাধান্য পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর সরকারের বাজেট পরিকল্পনায়। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন নতুন কর আরোপ ছাড়াই ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য ৭৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পেশকৃত বাংলাদেশের প্রথম বাজেটে রাজস্ব এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয় যথাক্রমে ৪৩৪ কোটি ৫ লাখ এবং ৩১৮ কোটি ৩ লাখ টাকা। ১৯৭৩-৭৪ সালের অর্থবছরে জন্য বাজেট ছিল ৮৩০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং এই বাজেটে রাজস্ব ও উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয় যথাক্রমে ২৯৫ কোটি ৩০ লক্ষ এবং ৫২৫ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। ১৯৭৪-৭৫ সালে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দসহ রাজস্ব এবং উন্নয়ন ব্যয় যথাক্রমে ৪৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং ৫২৫ কোটি টাকা সর্বমোট ৯৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কল্যাণ ও উন্নয়নমুখী ১৯৭৫-৭৬ সালের বাজেটের পরিমাণ ছিল সর্বমোট ১৫৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ বাজেটে রাজস্ব ও উন্নয়ন ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫৯৯ কোটি ১৯ লাখ এবং ৯৫০ কোটি টাকা।
দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ তথা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে বঙ্গবন্ধু প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরী মনোভাব নয়’ পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বনে বাংলাদেশ প্রথম তিন মাসের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ ৬৩টি দেশের স্বীকৃতি লাভ করতে সক্ষম হয়। ৩ মাস ২১ দিনের মধ্যে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দুই বছর দুই মাসের মধ্যে পাকিস্তানসহ সর্বমোট ১২১টি দেশ স্বীকৃতি প্রদান করে। দেশ অর্জন করেছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ জাতিসংঘের অনেক সংস্থার সদস্য পদ। পরিপূর্ণ ধার্মিক ও অবিনাশী অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঋদ্ধ বঙ্গবন্ধু পবিত্র ইসলাম ধর্মের আদর্শ-চেতনা বিকাশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন। শিক্ষা প্রসারে কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন ও শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। বঙ্গবন্ধু নগর-গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণে প্রাথমিকভাবে গ্রামে ৫০০ ডাক্তার নিয়োগ করেন। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে থানা স্বাস্থ্য প্রকল্প গ্রহণ ছিল অতিশয় তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। ক্ষতিগ্রস্ত রেল ও সড়ক সেতু দ্রুত সময়ে পুন:নির্মাণ, ব্যাংক-বীমা-শিল্প-ব্যবসা সকল বিরাজমান অরাজকতা নির্মূলকল্পে দক্ষ পরিচালক নিয়োগ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ক্রয়/আমদানি এবং চলমান ক্রিয়াশীল পুঁজির সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ ছিল এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পাকিস্তান ও তাদের মিত্র শক্তি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানামুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ আর্থ-সামাজিকভাবে নির্মম নাজুক অবস্থায় নিপতিত একটি জাতিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা বাঙালি জাতিকে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে নিরলস সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন পিএল ৪৮০’র তথাকথিত পরনির্ভরশীলতার করায়ত্ত চুক্তির শর্ত অবজ্ঞা করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিউবায় পাট রপ্তানির বিষয়কে ঘিরে ভূমধ্যসাগর থেকে বাংলাদেশে খাদ্য শস্য নিয়ে আসা জাহাজগুলোর পথ ঘুরিয়ে দিয়ে ১৯৭৪ সালে চক্রান্তমূলক নৃশংস-কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বাসন্তী নামক এক বাঙালি মেয়েকে মাছ ধরার জাল পরিয়ে দুর্ভিক্ষের ছবি বিশ্বব্যাপি প্রচার এবং এদেশকে অকার্যকর করার নানাবিধ অপচেষ্টাসমূহকে অসীম সাহসিকতা, বিচক্ষণতা ও দেশ পরিচালনার দূরদর্শিতায় সামগ্রিক পরিস্থিতি উত্তরণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল উঁচুমাত্রিকতায় সফল ও সার্থক ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মহান স্বাধীনতার অব্যবহিত-স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সূচনা থেকেই ৭ মার্চ ১৯৭১ তাঁর ভাষণে ঘোষিত ‘মুক্তির সংগ্রাম’ কার্যকর করার নিখাদ অভিপ্রায়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত সকল খাতকেই বিবেচনায় এনেছেন। দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে নির্মিত উন্নয়ন-ধর্মীয়-স্বজাত্যবোধ-দেশপ্রেম-দুর্নীতি নির্মূল-কৃষি ও শিল্প উৎপাদন-অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি-সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রতিটি দার্শনিক ভিত্তিকে উম্মিলিত করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনায় দৃশ্যমান উন্নয়ন অগ্রগতি ছিল অপরিমেয় উৎসাহ-অনুপ্রেরণার। গৃহীত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রায়োগিক মূল্যায়নে প্রণয়ন-কার্যকারিতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাধারণ পারঙ্গম-পারদর্শী। বিশ্বপরিমণ্ডলে স্বল্প পরিসরে নির্মাণ করতে পেরেছিলেন নান্দনিক-দৃঢ়চেতা, সৃজন-মননশীল, দেশপ্রেম-উন্নয়ন প্রকৌশলীর অত্যুজ্জ্বল আকাশচুম্বী উপমা। শুধু বাঙালির বঙ্গবন্ধু নয়; শান্তিময় ধরিত্রীর নবতর উন্মেষে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তাঁকে বিশ্বনেতার অভিধায় অভিষিক্ত করেছে- জাতির জন্য এর চেয়ে গৌরবোজ্জ্বল-মহিমান্বিত সম্মান আর কী হতে পারে! বঙ্গবন্ধুর প্রাসঙ্গিক নির্দেশনায় বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল কর্মকৌশলে তা প্রবাহমান ও প্রতিভাত। দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী তথা কৃষক মুক্তির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়ে দেশ আজ কৃষি উৎপাদন-বিপ্লবে উদ্ভাসিত ও বিশ্বনন্দিত। কৃষক ও কৃষি অর্থনীতি বাংলাদেশের প্রাণস্পন্দন। বঙ্গবন্ধুর ধারণকৃত এই প্রতিপাদ্যকে অবিনশ্বর করার মানসে বর্তমান সরকারের রূপকল্পে তা নিবিড় প্রতিফলিত। পরিশেষে খ্যাতিমান কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘দেশোদ্ধার’ কবিতার পঙক্তি উচ্চারণে নিবন্ধের ইতি টানছি। “বার-বার তিনবার, -এবার বুঝেছি চাষা ছাড়া কভু হবে না দেশোদ্ধার!/শোন রে শ্রমিক শোন ভাই চাষা আমাদের বুকে যত ভালবাসা/ঢালিব বিলাব তোদের দুয়ারে অকাতরে অনিবার।/তোদের দুঃখে হায়- পাষাণ হ’লেও চক্ষের জলে বক্ষ ভাসিয়া যায়।/ক’রো নাকো ভাই হীন আশঙ্কা, এবার নয়নে ঘষিনি লঙ্কা;/সত্য-সত্য ত্রিসত্য করি হৃদয় তোদেরই চায়।/ওরে চির পরাধীন! তোরা না জানিস, মোরা জানি তোর কী কষ্টে কাটে দিন।/নানা পুঁথি প’ড়ে পেয়েছি প্রমাণ/তোরাই দেশের তেরো আনা প্রাণ;/বৎসরে হায় বিশ টাকা আয়, তবু তোরা ভাষাহীন!”
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়