বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিচয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার চূড়ান্ত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি। মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর চার দিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ জন পাকহানাদারকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এখান থেকে মুক্তিবাহিনী বেশ কিছু গোলা–বারুদ হস্তগত করে। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর
নিয়ন্ত্রণে এলেও পাকবাহিনী তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠে মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করে। এই আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পিছু সরে আসতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনী পুনরায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে তিন দিক থেকে শত্রুকে আক্রমণ করলে পাকবাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের দখলে আনতে সক্ষম হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী পটিয়া থানা তাদের দখলে আনার জন্য মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত আছে। মুক্তিবাহিনী বিরিসিড়ির বিজয়পুরে পাক অবস্থানের ওপর অ্যামবুশ করে পাঁচ জন পাকহানাদারকে হত্যা করে। এখান হতে মুক্তিবাহিনী রাইফেলসহ ২১ জন রাজাকারকে ধরতে সক্ষম হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লীতে কংগ্রেস দলের কর্মীসভায় ভাষণ–দানকালে বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেই লাখ লাখ বাঙালি স্বদেশে ফিরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবন–যাপন করতে পারবে।
পাক কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন ভালুকা থেকে একদল রাজাকার সঙ্গে নিয়ে কাঁঠালি গ্রামে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করতে এলে মুক্তিবাহিনীর স্কেশন কমান্ডার গিয়াসউদ্দিন এবং ৩ নম্বর স্কেশন কমান্ডার আবদুল ওয়াহেদের নেতৃত্বে পরিচালিত অতর্কিত আক্রমণে তিন জন পাকহানাদার এবং সাত জন রাজাকার নিহত হয় এবং সাত জন পাকসৈন্য আহত হয়। পরে পাকহানাদাররা মৃতদেহগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।
শত্রুপক্ষ বুঝতে পারে মুক্তিযোদ্ধাদের আর কোনোভাবেই ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। পরাজয় নিশ্চিত জেনে মরণকামড় দিতে শুরু করে দখলদার বাহিনী। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল নিয়াজী তার রাজাকার, আলবদর ও সেনাবাহিনীকে দেশের চারদিকে ছড়িয়ে দেয় নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালাতে। তবে ডিসেম্বরের শুরুতেই গেরিলা আক্রমণ থেকে সম্মুখযুদ্ধের গতি বাড়ে। প্রবাসী সরকার অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়, বাংলাদেশের বিজয় আসন্ন। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের খবর প্রচারিত হতে থাকে। বাজে জয়ের গান। রাজধানী ঢাকায় গেরিলাযোদ্ধারা একের পর এক গুঁড়িয়ে দিতে থাকেন দখলদারদের আস্তানা। পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তান শাখার নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার লক্ষ্যে অবিলম্বে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে ভারত আক্রমণ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আবেদন জানান।