তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মত পাঠদান, জ্ঞান বিতরণ, সৃজন ও গবেষণা করছে। কিন্তু র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে। এর কারণ হলো আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং যারা করে, তাদের সাথে যোগাযোগ না থাকা। যার কারণে আমরা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে আসতে পারছি না। অবকাঠামো উন্নয়ন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় হতে পারে না। অনেক অনুুন্নত, ছোট বিশ্ববিদ্যালয়ও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণায় ভালো অবদান রাখছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জারুলতলায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু চত্তরে এসে শেষ হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জারুলতলায় শুরু হয় আলোচনা সভা।
তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা একটি বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি। জ্ঞান ও ন্যায়ভিত্তিক বহুমাত্রিক সমাজ ছাড়া গণতন্ত্র সুসংহত হয় না, দেশ এগিয়ে যায় না। এছাড়া দরকার মুক্তমতের চর্চা। বর্তমান সরকার একটি জ্ঞানভিত্তিক ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরাও চাই একটি বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে, যেখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রেখে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আলোকিত করবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সে কাজ করার সুযোগ বেশি থাকে। তিনি আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকবৃন্দ নোবেল বিজয়সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করেছেন।
চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে এবং উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, চবি এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম এবং সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম বদিউল আলম, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, সাবেক উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন, সাবেক উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শামসুদ্দিন, সাবেক চাকসু ভিপি মজহারুল হক শাহ চৌধুরী ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে ‘বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যাভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি কলা ও মানাববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ। স্বাগত বক্তব্য দেন, চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি প্রদানের পাশাপাশি পাঠদান, গবেষণা, সংস্কৃতি-রাজনীতি ও মুক্তিবুদ্ধির চর্চা করতে হবে। গবেষণা খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। মুক্ত সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। সংস্কৃতি হতে হবে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি। হিন্দি বা ইংরেজি গানের চর্চা নয়। এখানে নজরুল জয়ন্তী, রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপিত হবে। বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব না করলে শহরে গার্মেন্টস-মার্কেটের উপরে গড়ে উঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এর কোনো তফাৎ থাকবে না।
বক্তব্যের শুরুতে তথ্যমন্ত্রী মহাকালের মহানায়ক, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গ ও ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন এবং শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান সূচিত হয়। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সদস্যবর্গ, জাতীয় চারনেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের এবং চবির প্রয়াত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি এবং অতিথিবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয় এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
স্মৃতিচারণ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমার মনে পড়ে যখন ১৯৭৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছিলেন এই ক্যাম্পাসে। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। তখন এই ক্যাম্পাসে একটি অপশক্তির প্রভাব ছিল। ১৯৮৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর চাকসু ভবনের সামনে থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায় তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা। চট্টগ্রাম শহরে কুৎসা রটনা করা হয় আমাকে হত্যা করা হয়েছে। বারবার নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে রাজনীতির মাঠে। এখনো শরীরে সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম সেই ৩৩-৩৪ বছর আগে আমরাও একটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) জন্য দাবি জানিয়েছিলাম। তবে সেটি এখনও হয়নি। অন্য অ্যালামনাইদের মতো আমিও চাই চট্টগ্রাম শহরে টিএসসি করা হোক।
দ্বিতীয় পর্বে চবি সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল তাদের পরিবেশন করেন। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাবেক শিক্ষার্থী কেয়া পপি ও অজয় চক্রবর্তী। টুনটুন বাউলের পরিবেশনা সকলকে মুগ্ধ করে। শেষে পরিবেশিত হয় ব্যান্ড শো। এ ছাড়া ৫৬ তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে চবি ক্যাম্পাসকে অপরূপ সাজে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।