সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিন গতকাল রোববার নগরীর প্রবেশপথগুলোতে তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তৎপরতার মাঝেও দিনভর পায়ে হেঁটে শত শত মানুষ নগরীতে প্রবেশ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী কেবল যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এক্ষেত্রে পথচারীদের কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।
এদিকে সড়কে তুলনামূলকভাবে প্রাইভেট গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন পুলিশ জানান, মূলত পুলিশের নজর ছিল যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্সের দিকে। অনেকে বিভিন্ন যানবাহন ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে লুকিয়ে নগরীতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। যেসব পথচারী নগরীতে প্রবেশ করেন তাদেরকে থামিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। গতকাল নগরীর প্রধান প্রবেশপথ নতুন ব্রিজ, সিটি গেট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা এবং বিআরটিএ নতুন পাড়া মোড়ে সরেজমিনের ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চৌকি বসিয়ে কঠোর লকডাউন কার্যকর করেন। এ সময় প্রাইভেট কার, সিএনজি, অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে তারপর নগরীতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। অক্সিজেনের অদূরে বিআরটিএ নতুন পাড়া এলাকায় সকাল থেকে শত শত মানুষের জটলা লক্ষ্য করা গেছে। কর্মের তাগিদে এখনো শহরে ফিরছেন ঈদের ছুটিতে যাওয়া মানুষ। নগরীতে কড়াকড়ি থাকলেও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলায় সিএনজি টেক্সি চলাচল ছিল স্বাভাবিক। তাই টেক্সিযোগে যাত্রীরা নগরীর প্রবেশমুখগুলোতে জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকেন। সুযোগ বুঝে তারা পায়ে হেঁটে নগরীতে প্রবেশ করেন।
এদেরই একজন ফটিকছড়ির ভূজপুরের মোজাহের মিয়া। বিএআরটিএ নতুন পাড়া এলাকায় কথা হলে তিনি বলেন, চাচা চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি। অনেক কষ্ট করে পায়ে হেঁটে ও সিএনজিতে শহরে যেতে হচ্ছে। সরকার কঠোর লকডাউন দিয়েছে। এখন আমাদের তো কাজ আছে। আমি মেডিকেলে না গেলে একজন মৃত্যুপথযাত্রী চিকিৎসা পাবে না। আমি তো আর খুশিতে বের হচ্ছি না।
নতুন ব্রিজ এলাকায় কথা হয় পটিয়ার বাসিন্দা মাহাবুবুল আলমের সাথে। তিনি বলেন, আমি একটি পোশাক কারখানায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করছি। ঈদের ছুটির কারণে এই ক’দিন ছুটি ছিল। আজ (গতকাল) থেকে ডিউটি শুরু হয়েছে। এখন না গেলে চাকরি থাকবে না। চাকরি বাঁচাতে হলে কাজে জয়েন দিতে হবে।
এদিকে কঠোর লকডাউনে নগরজুড়ে ছিল রিকশার দাপট। যেহেতু গণপরিবহন বন্ধ, তাই রিকশাই ছিল একমাত্র বাহন। এই সুযোগে রিকশা ভাড়াও বাড়িয়ে দেন রিকশা চালকরা। উপায় না দেখে অনেক যাত্রীকে দ্বিগুণ ভাড়া গুণে গন্তব্যস্থলে যেতে হয়েছে।
গতকাল বিধিনিষেধ অমান্য করায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২১৫টি মামলায় ৬৩ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। প্রশাসনের ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিআরটিএর ২ জন ও সিটি কর্পোরেশনের ১ জনসহ ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক জানান, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। আজ (গতকাল) ঘোষিত বিধিনিষেধ না মানার দায়ে বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং শপিংমলে অভিযান পরিচালনা করা হয়।