ইসলাম পৃথিবীর একমাত্র মানবতার কল্যাণকামী শ্রেষ্ঠধর্ম। পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে মানবতার কল্যাণ সাধন করাকে এতোটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন তোমরা শ্রেষ্ঠ–উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যে তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। (সুরা আল–ইমরান ১১০)। মহানবী (সা.)-ছিলেন মানবতার মূর্ত প্রতীক। আল্লাহতাআলা তাঁকে গোটা সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত বানিয়ে পাঠিয়েছেন।
ইসলাম বস্তুুনিষ্ঠ সৌভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম কখনই দেশ জাতীয়তা ও ভাষার ভিত্তিতে বৈষম্য করার অনুমতি দেয় না। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, মহানআল্লাহ আমাদেরকে এমন মহান ধর্মের অনুসারী করেছেন। এই ইসলামের মাঝে পৃথিবীর অন্যসব ধর্মেও যাবতীয় সৌন্দর্য্য ও মাধুর্যের সন্নিবেশ ঘটেছে। ইসলামের কল্যাণে আমরা সবধর্মেও পরিপূরক ও সম্পূরক সৌকর্য ধারণ করতে পেরেছি। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামসম্মত পদ্ধতিতে ইবাদত করার নির্দেশ করেছেন। ইসলাম এমন এক ধর্ম যার মাঝে মানবিকতার শতভাগ প্রকাশ ঘটেছে। মানবধর্ম ইসলামের মাঝেই সৃষ্টি রহস্যের চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে। পৃথিবীর সর্বশ্রেণির মানসিকতার সঙ্গে ইসলাম শতভাগ সঙ্গতিপূর্ণ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, এটাই আল্লাহতায়ালার প্রকৃতি যার ওপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। ইসলামের মাঝে মানবজীবনের সব বিষয়ের পূর্ণ সংবিধান রয়েছে। ইসলাম সুষ্ঠু–লেনদেনের কথা বলে। ইসলাম উন্নত চরিত্র ও সুউচ্চ নৈতিকতার কথা বলে।
ইসলাম ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে কার্যকর ধর্ম। ইসলাম আমাদেরকে ইহকালীন জীবনে সৌভাগ্য ও পরকালীন জীবনে চিরস্থায়ী নেয়ামতের নির্দেশ করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেবো যা তারা করতো। আমাদের ধর্ম ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা–দীক্ষা ও জ্ঞানচর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করে। প্রিয় রাসূল মুহাম্মদ (সা.)-ওপর সর্বপ্রথম যে আয়াত অবতীর্ণ হয় সেখানে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন হে রাসূল! আপনি পড়ুন আপনার সেই রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। যে ব্যক্তি ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করবে মহান আল্লাহ তাকে সম্মানিত করার অঙ্গীকার করেছেন। তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের সঙ্গে এ অঙ্গীকার করছেন যে তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসন কর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসন কর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে। ইসলাম এমন এক ধর্ম যা সর্বযুগে সর্বস্থানে কার্যকর। যে কোনো পরিবেশে যে কোনো সমাজে ইসলাম শতভাগ কার্যকর। পৃথিবী যতোই অগ্রসর হোক জাতিসত্তার যতোই উন্মেষ ঘটুক ইসলামের আবেদন কখনই ক্ষুণ্ন হবে না। ইসলামের যৌক্তিকতা ও কার্যকারিতা প্রতিনিয়ত প্রমাণিত হয়ে চলেছে। মানবতা সর্বযুগে ইসলামের কাছে ঋণী।
ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম। ইসলাম পৃথিবীর সব মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করার কথা বলে। ইসলাম মানবতার জয়গানের কথা বলে। মহানআল্লাহ বলেন নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। আল্লাহর রহমত বরকত ও সাওয়াব অর্জনের সবচেয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি বিশেষত মানুষের প্রতি কল্যাণ ও উপকারের হাত বাড়িয়ে দেয়া। সকল প্রকার মানব সেবামূলক কাজের জন্য অকল্পনীয় সাওয়াব ও মর্যাদার কথা অগণিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ইসলাম ভালোবাসা সমপ্রীতি সামাজিকতা ও দয়ার ধর্ম। মহানআল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পরে ভাই। ইসলাম আমাদেরকে সবধরনের বৈষম্য ও বিবাদের ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান জানায়। ইসলাম অন্যকে মানসিক প্রশান্তি প্রদানের কথা বলে। ইসলাম আমাদেরকে পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব পোষণের কথা বলে। ইসলাম আমাদেরকে উদ্যমী ও কর্মচঞ্চল হওয়ার কথা বলে। নবী করীম (সা.)-বলেন শক্তিশালী ও কর্মক্ষম মুমিন কল্যাণকর। দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সেই মহান আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।
ইসলাম আমাদেরকে সংকীর্ণতা ও বিবাদ–কলহ ত্যাগ করার কথা বলে। ইসলামি শরিয়তের মাঝে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই। যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো সময় ইসলাম শেখার অধিকার রাখেন। ইসলাম অত্যন্ত সহজ ধর্ম। প্রত্যেকের জন্যে ইসলাম অনুসরণ করা অত্যন্ত সহজ। ইসলাম সামাজিকতার ধর্ম। ইসলামের দুয়ার পৃথিবীর সব মানুষের জন্যে সবসময় উন্মুক্ত। ইসলাম সবাইকে তার ছায়াতলে আপন করে নেয়। মহানআল্লাহ বলেন, হে! মুমিনগণ তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো। ইসলাম আমাদেরকে বিবেক–বুদ্ধি জ্ঞান–বিজ্ঞান ও নৈতিকতার সদ্ব্যবহারের কথা বলে। ইসলাম সবাইকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার কথা বলে। আল্লাহ বলেন ক্ষমা অবলম্বন করুন। সৎকাজের নির্দেশ করুন। আর অজ্ঞদের এড়িয়ে চলুন।
ইসলাম আমাদেরকে সবসময় সুন্দর কথা বলার নির্দেশ করে। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা মানুষকে সুন্দর কথা বলো। ইসলাম সবার মেধা–বুদ্ধি ও সম্পত্তির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বহন করে। ইসলাম অন্যের বিপদে সঙ্কটে দুঃসময়ে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের ধর্ম ইসলাম সৃষ্টির প্রতি দয়ার কথা বলে। অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসার কথা বলে। ইসলাম বলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বন্ধন গভীর করতে হবে। এই ইবাদত বান্দার জন্যে রিজিকের দুয়ার খুলে দেবে। সমাজে শান্তি–শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করবে। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে পিতা–মাতার আনুগত্য করার নির্দেশ করে।
মহানবী (সা.)-এর মানবিকতা : মহানবী (সা.)-তাঁর সঙ্গীদের খুব ভালোবাসতেন। তাঁদের সুন্দর ও সম্মানজনক নামে সম্বোধন করতেন। সর্বদা তাঁদের প্রতি যত্নশীল থাকতেন। সেবা–সহযোগিতায় সচেষ্ট থাকতেন। সঙ্গীদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। অনুপস্থিত দেখলে খোঁজ নিতেন। অসুস্থ হলে দেখতে যেতেন। কেউ মারা গেলে কাফন–দাফন ও জানাজায় অংশ নিতেন। তাঁদের দুঃখ– বেদনায় সমব্যথী হতেন। রাসুল (সা.)-কখনো নিজেকে রাজা এবং সাহাবিদের প্রজা মনে করতেন না; বরং কেউ তাঁর সঙ্গে প্রজাসুলভ আচরণ করলে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন। এক ব্যক্তি তাঁর কাছে গিয়ে ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে রইল। রাসুল (সা.)-বললেন স্বাভাবিকভাবে বসো। আমি কোনো বাদশা নই। আমি শুকনো গোশত খেয়ে জীবন ধারণকারী এক সাধারণ কুরাইশ নারীর সন্তান।
ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানবতার কল্যাণের জন্যই ইসলামের আগমন। মানব সমাজের সর্বক্ষেত্রে সঠিক দিক–নির্দেশনা দিয়ে মানব সমাজকে কল্যাণকামী সমাজে পরিণত করা হয়েছে। মহানআল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে হেদায়েতের সরলপথে পরিচালিত করুন। আমাদেরকে খাঁটি মুমিন হওয়ার তওফিক দিন। আমিন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।