ডেঙ্গু শনাক্তের হার বৃদ্ধির পর নগরে মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ৫৭টি হট স্পটসহ ৪১ ওয়ার্ডে ১০০ দিনের এ ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় মশার কীটনাশক ছিটানো হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ সম্মুখ চত্ত্বরে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার।
এর আগে গত ৪ জুন চকবাজার ওয়ার্ডের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটিয়ে এডিস মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আরেকটি ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করেছিল চসিক। তবে সেটা কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মশার কীটনাশক ছিটাতে তারা দেখেন না। এ অবস্থায় গতকাল উদ্বোধন করা ক্রাশ প্রোগ্রাম যেন আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না থাকে তার দাবি জানান নগরবাসী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের পাশাপাশি দেড় হাজার আরবান ভলান্টিয়ার এবং রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা এ ক্রাশ প্রোগ্রামকে সফল করতে কাজ করবেন। অনেকে ছাদ বাগান করলেও ফুলের টবসহ বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার করেন না, আবার কর্মীরা গেলেও পরিষ্কার করতে দেন না। এ অবস্থা প্রতিরোধে প্রয়োজনে ড্রোন কিনে ছাদ পর্যবেক্ষণ করে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি গবেষণাদল গঠন করি। উনাদের বিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শের আলোকে বিমানবাহিনী থেকে আগামী পাঁচ মাসের জন্য মশা নিধনের ওষুধ মজুদ করা হয়েছে। আমরা ৫৭টি হটস্পটসহ ৪১টি ওয়ার্ডে ১০০ দিনব্যাপী ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করব।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, এবছর ডেঙ্গুতে যে কজন রোগী মারা গেছেন তারা সবাই হাসপাতালে একদম শেষ পর্যায়ে ভর্তি হতে এসেছিলেন। অথচ অসুস্থতার প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে হয়তো তাদের বাঁচানো যেত। একারণে জনগণের প্রতি আহ্বান আপনারা ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হোন, চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।
ডা. সাহেনা আক্তার সচেতনতার উপর জোর দিয়ে বলেন, সবাই ঘরের আশেপাশে মশা জন্মানোর মতো স্থান থাকলে তা পরিষ্কার করুন। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ৩৭০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্য চলতি মাসে শনাক্ত হয়েছেন ১৮৮ জন। এছাড়া জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন এবং মে মাসে শনাক্ত হন ৫৩ জন। শনাক্তদের মধ্যে ২৫০ জনই নগরের বাসিন্দা। এ বছর ডেঙ্গুতে জেলায় মারা গেছে মোট ৮ জন। তার মধ্যে জানুয়ারিতে ৩ জন মারা যান। বাকিরা মারা গেছেন চলতি মাসে। এদের মধ্যে চারজন শিশু, দুজন নারী ও দুজন পুরুষ।
গতকাল ক্রাশ প্রোগ্রাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম। উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. হাফিজুল ইসলাম, কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত।