‘গলাকাটা’ হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিল এবং বিদ্যমান করবিধি-১৯৮৬ বাতিলের দাবিতে আজ শনিবার থেকে নগরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ও অলি-গলিতে মিছিল সমাবেশ করা হবে। কমিটি গঠন করে সংঘটিত করা হবে করদাতাদের। এরপর আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর গণ সমাবেশ করবে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ।
সংগঠনটির উদ্যোগে গতকাল বিকেলে আয়োজিত গণমিছিল ও সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কদমতলীতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হোল্ডিং মালিকরা অংশ নেন। তারা দাবি করেন, সিটি মেয়র বার বার কর বৃদ্ধি করে করের আওতা বাড়ানোর কথা বললেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের উপর ২০১৭ সালে দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার ফলে তাদের উপর করের বোঝা বেড়েছে। বর্তমানে যে আপিল চলছে সেখানেও অনিয়ম হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা। গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিল করার জন্য সিটি মেয়রের প্রতি আহবান জানানো হয় সমাবেশ থেকে। অন্যথায় আন্দোলন তীব্র করারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। ভাড়ার ভিত্তিতে ধার্যকৃত পৌরকর বাতিল করে পূর্বের ন্যায় দৈর্ঘ্য-প্রস্থের উপর ভিত্তি করে কর ধার্য্য করারও দাবি করা হয় সমাবেশ থেকে। চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল আবছারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মুহম্মদ আমির উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মালেক, সাবেক সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি ও করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি।
অধ্যাপক মুহম্মদ আমির উদ্দিন বলেন, ১৯৮৬ সালের করবিধি প্রথমে কার্যকর করা হয়েছিল চট্টগ্রামে। এরপর ঢাকা, রাজশাহী এবং খুলনায়। এটা চট্টগ্রামের প্রতি ষড়যন্ত্র ছিল। তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচনী প্রচারে পাড়া-মহল্লা, অলিতে-গলিতে পথসভা করে চট্টগ্রামবাসীকে গৃহকর না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু চেয়ারে বসে এক বছর যেতে না যেতেই স্থগিতকৃত ঘরভাড়ার উপর অন্যায্য কর নেয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিলেন। বিষয়টিকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আদি অধিবাসি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ নগর পিতার কাছ থেকে নগরবাসী এমন প্রত্যাশা করে না।
তিনি বলেন, ভাড়ার উপর হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করার বিষয়টি বাংলাদেশের কোথাও নাই। এমনকি পৃথিবীতেও নাই। এরশাদ সরকারের আমলে করা অকার্যকর করবিধি -১৯৮৬ বাতিল করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যৌক্তিক উপায়ে গৃহকর না নিলে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিনি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ও পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন করে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের পরবর্তী সভায় উপস্থিত থাকার আহবান জানান।
সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মালেক বলেন, শহরে দুই লাখ হোল্ডিং আছে। পাঁচ হাজার টাকা করে নিলে ১০০ কোটি টাকা কর আদায় করা যাবে। এর মধ্যে ২২ কোটি টাকা বেতন দিয়ে দিলে আরো ৭৮ কোটি টাকা কর্পোরেশনের ফান্ডে থাকবে। এর বাইরে বন্দর, কাস্টমস এবং রেলওয়ে থেকে বড় অংকের ট্যাক্স নিতে পারে। সাধারণ মানুষ থেকে কেন বেশি নিবে? তিনি বলেন, পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে এসেসমেন্ট স্থগিত ছিল। বর্তমান মেয়র এসে মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালু করে আমাদের উপর কর বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ট্যাক্স নিয়ে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে। কর আদায়কারীদের মাধ্যমে সংঘটিত অর্থের ভাগ সংশ্লিস্টরা পাচ্ছে না। আপিলে যারা টাকা দেয় তাদের ট্যাক্স কমে যাচ্ছে। প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরী গরীবদের নামমাত্র ২০ টাকা ট্যাক্স ধার্য্য করে হোল্ডিং নম্বর বাঁচিয়ে রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
হাসান মারুফ রুমি বলেন, নির্বাচনের আগে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন কর এক টাকাও বৃদ্ধি করবো না। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। এর আগে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনও আংশিক স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মেয়র বার বার কথা দিয়েও রাখতে পারলেন না। সেই বিচারের ভার নগরবাসীর উপর দিচ্ছি। তিনি বলেন, মেয়র বার বার না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানোর কথা বলছেন। কিন্তু এটা সত্য নাকি মিথ্যা তা যারা করের চিঠি পেয়েছেন তারাই ভাল জানেন। মেয়র বার বার বলেন তিনি নাকি চট্টগ্রামবাসীর জন্য চিন্তা করেন। কিন্তু নালায় পড়ে গিয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। এর চেয়ে দু:খজনক আর কি হতে পারে। এসব নিয়ে মেয়র সিডিএকে দোষ দেন।
হাসান মারুফ রুমি বলেন, আপিল করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু ১০ হাজার টাকার ট্যাক্স এক লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ৬০-৭০ শতাংশ কমালেও তা পাঁচ গুণ বেশিই থাকবে। তিনি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগে দুদকের নজর দেয়ার আহবান জানান। মো. নুরুল আবছার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণায় ফায়সালা হওয়া বিষয়ে দ্বিতীয়বার রাস্তায় নামা চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিব্রতকর। চট্টগ্রামবাসী ঘরভাড়ার আয়ের উপর আয়কর দেয়। এরপরও গৃহকর নেয়া অযৌক্তিক।
তিনি বলেন, বাড়িভাড়ার উপর গৃহকর ধার্য করায় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গৃহকর। কোনো সৎ নাগরিকের পক্ষে তা পরিশোধ করা অসম্ভব। কর পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আদি চট্টগ্রামবাসী বাস্তচ্যুত হয়ে রোহিঙ্গা ভাগ্য বরণে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসী বাড়িভাড়ার আয় দিয়ে সংসার চালায়। সাংসারিক ব্যয় নির্বাহের পর এ অস্বাভাবিক গৃহকর পরিশোধ করার সামর্থ্য ভবন মালিকের নেই। এটাই বাস্তবতা। এখানে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কিছু নেই। করোনাকালিন সময়ে ভেঙে পড়া চট্টগ্রামের অর্থনীতি এখনো নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তার উপর অন্যায্য হোল্ডিং ট্যাক্স ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’। জান্নাতুল ফেরদৌস পপি বলেন, নগরবাসীর দাবি মেনে না নিলে আরো জোরালো আন্দোলন হবে। অতিরিক্ত কর মানুষ দিতে পারবে না। সে সামার্থ্য তাদের নাই। তিনি বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর উপর চাপিয়ে দেয়া করের বোঝা দূর। সাজ্জাদ হোসেন জাফর ও সোহেল আহমদের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুজিবুল হক, হাজী হারুনুর রশীদ, মফিজুর রহমান, এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, মীর মো. ইসলাম, মো. নজরুল ইসলাম, অ্যারশাদ হোসেন, হাজী সৈয়দ হোসেন, হাসান ইমরান, হাসান মুরাদ শাহ, মো. ইসলাম, মো. আনোয়ার। এক শিল্পী আঞ্চলিক গানে গানে ‘বর্ধিত’ করের প্রতিদবাদ জানান। করদাতা হাজী নুরুল ইসলাম বলেন, জনগণ কষ্ট পাচ্ছে। সবাই এক থাকলে জয় আমাদের হবে।












