যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী। গতকাল শুক্রবার রাতে হাটহাজারীর পার্বতী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আল আমিন সংস্থা আয়োজিত তিন দিনের তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তার এমন বক্তব্য আসে। খবর বিডিনিউজের।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের এই মাহফিলে অন্যতম প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু দুদিন ধরে যুবলীগ-ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিরোধের মুখে মামুনুল হক চট্টগ্রামে আসেনি। ওই মাহফিলে হেফাজতের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মদিনা সনদে দেশ চলবে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। মদিনা সনদে যদি দেশ চলে, ইসলামবিরোধী কোনো কাজ হতে পারবে না। ইনশাল্লাহ প্রধানমন্ত্রী (ভাস্কর্য বসাতে) দেবে না, দেবে না। মদিনা সনদে যদি দেশ চলে, কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না। মদিনায় কি কোনো ভাস্কর্য আছে?’
বাবুনগরী বলেন, ভাস্কর্য- এটা শরিয়তসম্মত নয়। কোনো পার্টি বা নেতার নাম বলছি না, যার ভাস্কর্য হোক না কেন। আল্লাহর কসম, কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য বসায়, আমি সর্বপ্রথম সেই ভাস্কর্য টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেব। যে কোনো দল ভাস্কর্য বসাবে, আমার আব্বার ভাস্কর্যও যদি স্থাপন করা হয়, সেটা শরিয়ত সম্মত হবে না। টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেব।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে অন্তর থেকে ভালোবাসি। আপনার আব্বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, আমরা উনাকে শ্রদ্ধা করি। এই বঙ্গবন্ধুকে কারা মেরেছে? কোনো মাদ্রাসার ছাত্র? কোনো আলেম ওলামা? না, না। এই বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলেছে বঙ্গবন্ধুর মানুষরা। আপনাকে সতর্ক করছি। আপনার ঘাড়ে যেসব নাস্তিকরা বসে আছে, তারাই আপনার ক্ষতি করবে, তারাই আপনাকে মেরে ফেলবে। আমরা আপনার দুশমন নই। আমরা দেশের শান্তি শৃক্সখলা চাই। মাহফিল থেকে সরকারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরী। বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম বন্ধ করা, কাদিয়ানীরা সরকারিভাবে ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করা, দূতাবাস বন্ধ করে ফ্রান্সের দূতকে বহিষ্কার করা এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করার দাবি রয়েছে সেখানে।
বাবুনগরী বলেন, দেশ চলবে মদিনা সনদে। এই কথায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে একমত। নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ মদিনা সনদে চলবে। রাশিয়া, আমেরিকা, ভারত, চীনের সনদে চলতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বিএনপির লড়াই নাই। ঈদের নামাজের কাতারে তারা পাশাপাশি দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগ বিএনপির মাঝখানে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। বর্তমান বাংলাদেশ আর সারা বিশ্বে কঠিন লড়াই আস্তিক আর নাস্তিকের।
হেফাজতে ইসলামকে ‘সর্ম্পূণ অরাজনৈতিক সংগঠন’ হিসেবে দাবি করে সংগঠনটির শীর্ষ নেতা বলেন, এখনো হক কথা বললে গ্রেপ্তার করে কি না, সমস্যা নাই গ্রেপ্তার করুক। রিমান্ডে নিক, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিক, আমাদের হক কথা বলতে হবে। হাটহাজারী মাদ্রাসার অদূরে তিন দিনব্যাপী ওই মাহফিলের আয়োজক ‘আল আমিন সংস্থা’ নামের একটি সংগঠন হলেও মূলত হেফাজত সংশ্লিষ্টরাই এই সংগঠনের সাথে জড়িত।