‘বাংলা’ আমার ভাষা, আমার অহংকার, আমি আমার মায়ের মুখের, প্রথম বোল শুনি বাংলায়, আর তাতেই আমার শেখা প্রথম বুলি মা। বুকের অতলে নিংড়ে আসে মা ডাক, চোখে মুখে রাজ্য জয়ের উপচে পড়া ঝিলিক, ভেসে ভেসে উঠে, যেন মনের অতলান্তে সে মায়ায় জড়ানো ডাক। কেমনে ভুলি আজ একুশে ফেব্রুয়ারির কথা — “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” -মনে হয় যেন, দামামা বাজিয়ে হিংস্র হায়েনারা, এক নিমিষেই ঝাঁপিয়ে পড়ে, ছিন্ন ভিন্ন করে দিল সালাম, রফিক, বরকত, জাব্বার, শফিক আর কত না নাম অজানা তরতাজা প্রাণ। এক মুহূর্তেই, মায়ের বুক খালি হয়ে গেল হাজারো সন্তানের লাশে, কেমনে সহিবে তাঁরা, জননী আমার, বাংলা মায়ের। শোকের ছায়া, আজও ফিরে ফিরে আছে, তাঁদের সোনার ছেলেরা ফিরে আসবে, বলে দাওয়ায় বসে আহাজারি করে, যখনই মনে ভাসে সোনা ঝরা মুখগুলো তাঁদের … “খোকা আসবে ফিরে খোকা আসবে”- আহা ভারিক্কি হয়ে উঠে হৃদয় গহন, থাকি থাকি সারা বাংলার বিশ্বে- “আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এ বাংলায়”- মন আমার টানে, এমনি করেই, বার বার মায়ের বুকে, মুখ লুকিয়ে শুনি, যেন তাঁদের পদধ্বনি। বাংলার আকাশে বাতাসে, আজও ভেসে বেড়ায়, আত্মার ধ্বনি তোলে বারবার ফিসফিসানি, বলে উঠে — “আমার দেশের পথের ধুলা/ খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি”-আত্মার আকুলতা, ব্যাকুল হৃদয়ের টান, হৃদয় গহনের প্রেম-ভালোবাসা, সব যেন এই বাংলাতেই, প্রস্ফুটিত হয়ে সুবাস ছড়ায়, অবিরাম অবিরত চলার পথের ওপাথেয় হয়ে, আর মনে মনে গেয়ে উঠে পথিকবর– “আমার এই পথ চলাতই আনন্দ” রূপ-সুধায় মোহিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রগাঢ় অনুভবে মন মোহিত হয়ে উচ্চারণ করেছেন—” আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি, চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি” “বাংলা” আমার প্রাণ, আমার গান, আমার টান, আমার হৃদয়, আমার প্রেম-ভালোবাসা, আমার মায়ের মুখের হাসি, আমার সোনাঝরা রোদ্দুর, তোমাতেই আমি লুটিয়ে থাকি, তোমাতেই হই বিলীন, সুধা ঢালে শত শত! একুশ তুমি চেতনায় সদা জাগ্রত আ-মরি “বাংলা ভাষা”।