সারাদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি। যাব কি? যাব না, সেই দ্বন্দ্বের দোলায় থাকতে থাকতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিলাম যাবই। যেতে আমাকে হবেই। সেদিন ছিল বিশ্ব শিক্ষক দিবস। যাঁরা এত কষ্ট করে, পরিশ্রম করে এত কিছু আয়োজন করেছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য হলেও আমার, আমাদের যাওয়া উচিত।
বলছি গত ৫ই অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী ও জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা। আলোয় আলোয় পরিপূর্ণ চারিদিক। বিশ্ব শিক্ষক দিবস ছিল বলে শিক্ষকদের নিয়ে শ্রদ্ধা ও আবেগ মেশানো কথা দিয়ে সাজানো বড় বড় প্ল্যাকার্ড। রাতের অন্ধকারকে ভেদ করে সেই আলো জসীম হল ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। এক মন্ত্রমুগ্ধকর অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় শত শত দর্শক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আসন অলংকৃত করেছেন সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাননীয় সভানেত্রী ও প্রয়াস স্কুলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ফাতেমা তুজ জোহরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য একটি দেশকে বিশ্বের দরবারে খুব সহজে সুপরিচিত করে। আর যে জাতি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কে মনে প্রাণে ভালোবাসে ও লালন পালন করে সে জাতি আপন মহিমায় পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকে। আমরা বাঙালি। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই আমাদের পথ চলা। আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। আর এই নিজস্বতাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেওয়াই ছিল এই অনুষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য। সাধারণত ইংলিশ মাধ্যম স্কুল কলেজগুলোতে ইংরেজি সংগীত, ছড়া কিংবা নাটিকা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ইংরেজি ভাষাটাকে প্রাধান্য দিয়েই সাজানো হয় অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্ব। সেক্ষেত্রে এই স্কুলের অনুষ্ঠানটি ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। দু‘শো তিয়াত্তর ছাত্র ছাত্রীর অংশগ্রহণে তুলে ধরা হয় বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নানাদিক ও নানাকথা। তারা শিক্ষা গ্রহণ করছে ইংরেজি মাধ্যমে কিন্তু তাদের মন প্রাণ জুড়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীমউদ্দিন। তারা জানে কিভাবে তানপুরা, বাঁশি, বেহালা, তবলা ঢোলে বাঙালির গান, সুর বাজিয়ে মাতিয়ে রাখা যায় দর্শক হৃদয়। আমরা বাঙালি, আমরা বাংলা কে ভালোবাসি আর তাই তো বাংলা গানের সুর আমাদের মন প্রাণকে আন্দোলিত হয়। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আমাদের অহংকার। আর সেই কৃতিত্ব ও সম্পূর্ণ অবদান অভিভাবক, ও শিক্ষক শিক্ষিকাগণের। কারণ তাঁরাই বাংলা, বাংলার ইতিহাসকে সর্বোপরি আমাদের শিকড়কে সন্তান ও ছাত্র ছাত্রীর মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
অনুষ্ঠান শেষে মাননীয় মেজর জেনারেল শাহীনুল হক সকল শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা থাকা উচিত যা তাকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম হবে এবং সম্মান ও সুনাম বয়ে আনবে। শুধু পড়ালেখা কিংবা পুঁথিগত বিদ্যায় সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না সেই জ্ঞানকে সমাজ ও দেশের কাজে লাগাতে হবে। বিশ্বের মানচিত্রে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে হবে। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন কলেজর অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মোহাম্মদ তানভীর হোসেন।
মনের মণিকোঠায় জমিয়ে রাখার মত একটি বৃষ্টিস্নাত রুপালি সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য সকল শিক্ষক ও অংশগ্রহণ কারী ছাত্রছাত্রীদের জানাই অশেষ ধন্যবাদ ও ভালোবাসা। যারা পুরস্কৃত হয়েছে তাদেরকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। আর তারই সাথে রবিঠাকুরের একটি গানই বেজে উঠছে মানসপটে -‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়া ও প্রাণে / এ জীবন পূর্ণ কর,/ এ জীবন পূর্ণ কর/ দহন দানে।’