ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র বিপ্লবী ও শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তি আন্দোলনে প্রথম নারী আত্মোৎসর্গকারী প্রীতিলতার ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৪ সেপ্টেম্বর।
বীরকন্যা নামে সুপরিচিত প্রীতিলতার জন্ম চট্টগ্রামে ১৯১১ সালের ৫ মে। চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর স্কুলের মেধাবী ছাত্রী প্রীতিলতা ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাস করেন। ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে অংশ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সমগ্র ঢাকা বোর্ডে প্রথম হবার কৃতিত্ব ছিল তাঁরই। ১৯৩১ সালে তিনি কলকাতা বেথুন কলেজ থেকে দর্শনে ডিস্টিংশন সহ গ্র্যাজুয়েশন করেন এবং সে বছরই প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রামের অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই প্রীতিলতা বিপ্লবী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ঢাকার বিপ্লবী দল ‘দীপালী সংঘ’ এবং কলকাতার ‘ছাত্রী সংঘে’র সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের সময় প্রীতিলতা বেথুন কলেজের মেয়েদের মধ্যে একটি গোপন বিপ্লবী দল গড়ে তোলেন। মধুর, অমায়িক ব্যবহার দিয়ে মেয়েদের সহজেই আপন করে নেবার ক্ষমতা ছিল তাঁর। সূর্যসেন সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে প্রীতিলতার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। বিপ্লবীদের জন্য তাঁরা অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহ করতেন। ঝাঁসির রানির দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ অসীম সাহসী প্রীতিলতা ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে সূর্যসেনের নির্দেশে কয়েকজন বিপ্লবী সহযোদ্ধা সহ পূর্ণ সামরিক বেশে চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে অবস্থিত তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে যান। এই আক্রমণ সফল হলেও এক ইংরেজের গুলিতে আহত হন প্রীতিলতা। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে তাঁর। সহযোদ্ধারা সহ ফেরার পথে প্রীতিলতার গতি শ্লথ হয়ে আসে। তাই শত্রুর হাতে ধরা পড়ার আগেই নিজের পোশাকের ভেতর লুকিয়ে রাখা মারাত্মক বিষ পটাশিয়াম সায়েনাইড মুখে ঢেলে আত্মাহুতি দেন নিজেকে। প্রীতিলতার এই আত্মদান যুগ যুগ ধরে দেশপ্রেম আর সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।