দশমীর বিহিত পূজার অর্ঘ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে ভক্তদের আনন্দ-অশ্রুতে সিক্ত হয়ে গজে (হাতিতে) চড়ে বিদায় নিলেন দেবী দুর্গা। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে গেলেন মা দুর্গা। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বিহিত পূজার পর ভক্তের কায়মনো প্রার্থনা আর ঢাক-উলুধ্বনি-শঙ্খ নিনাদে সিঁদুর খেলায় মুখর হয়ে ওঠে মন্দিরগুলো। একদিকে বিদায়ের সুর। অন্যদিকে উৎসবের আমেজ।
পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের দশমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দশমীর বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে ঘটে সমাপ্তি। এরপর দেবীর বিসর্জন আর ‘শান্তিজল’ গ্রহণ। গত বুধবার বোধনে অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবীর আগমন ঘটে মর্ত্যে। এক বছর পর আবার তার ভক্তদের মাঝে পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন এমন আশায় ভক্তরা চোখের জলে দেবীর চরণে সিঁদুর রাঙিয়ে বিদায় জানালেন। দুপুরের পর থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দেবী দুর্গার জয়ধ্বনি, ঢাক-ঢোল, কাঁসর ও ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। এ সময় সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। প্রতি বছরের মতো এবছরও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়।
এবার মহামারী থেকে মুক্তির প্রার্থনা করেন মায়ের কাছে।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত বলেন, এ বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করা হয়েছে। করোনা পরিসি’তির মধ্যেও আমরা এটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। আশা করছি, আগামী বছর আমরা ভালোভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার আয়োজন করতে পারবো।
দুপুরের পর থেকে নগরীর বিভিন্নস্থানের পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমাগুলো একে একে আসতে শুরু করে পতেঙ্গা সৈকতে। তবে করোনা পরিসি’তির জন্য এ বছর হয়নি কোনো শোভাযাত্রা। শুধু বিসর্জনের জন্য যাদের প্রয়োজন, তারাই আসেন প্রতিমার সঙ্গে। তারপরও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে প্রতিমা বিসর্জন। এতে সহায়তা করে স্থানীয় ঘাট প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, ফলে বিভিন্ন সাবধানতা অবলম্বন এবং সবার সহযোগিতায় কোনো ধরনের গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন।
নগরীর ১৬ থানার প্রতিমা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও নেভাল একাডেমি ও অভয়মিত্র ঘাটে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। অপরদিকে কালুরঘাট এলাকায়ও কয়েকটি প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত :
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, সনাতন ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে অসুর নিধন করে সুর-সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের বার্তা প্রদান করে কৈলাসে ফিরে যা”েছ। তিনি করোনা মহামারী বিনাশে এবারে শারদীয় দুর্গোৎসব সংযম শৃঙ্খলায় শান্তি সম্প্রীতির জয়গান গাওয়া হয়েছে। তার সুর প্রতিদিন প্রতিক্ষণ অনুরণিত হোক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর পুজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার। বক্তব্য দেন, প্রশাসকের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম, চসিক পুজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি চসিক তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলুন কুমার দাশ, মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত, লায়ন আশিষ ভট্টাচার্য্য, অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জি, সুমন দেবনাথ, রত্নাকর দাশ টুনু, হিল্লোল সেন, মিথুন মল্লিক, অ্যাডভোকেট নটু বিশ্বাস, চসিক পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রতন চৌধুরী, রুমকি সেনগুপ্ত। উপসি’ত ছিলেন-উপ-পুলিশ কমিশনার বন্দর কামরুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ডিবি আবু বক্কর সিদ্দিক, চসিক উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু, সহকারী প্রকৌশলী অসীম বড়ুয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমীর মহাজন লিটন।
প্রশাসক আরো বলেন, আমাদের দেশে ধর্ম চর্চা আছে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই। কিছু কুপমণ্ডুক অশুভ উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। তাদের এই অপচেষ্টা আর চালানোর অবকাশ নেই। এখন ধর্ম পরিচয়ে কোন মানুষকে অবহেলা করা যাবে না। তিনি স্বাস’্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে শৃঙ্খলার সাথে দুর্গা পূজা সম্পন্ন করায় মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।