শীতের সকালে ভাপা পিঠার সাথে খেজুরের রস খাওয়া গ্রাম বাংলার পুরনো রেওয়াজ। প্রাচীনকাল থেকেই শীত ও খেজুরের রস যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলা আশ্বিন মাস থেকে সাধারণত রস সংগ্রহ শুরু হয়। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে শীতের প্রকোপ বেশি থাকায়, এই দুই মাসে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়। শীতের শেষে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে রস ও কমতে থাকে। কুয়াশা মোড়া সকালে গাছিরা গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হাঁড়ি হাঁড়ি রসের ধুম পড়ে যায় গ্রামাঞ্চলের হাটে বাজারে। শীতের সকালে গাছ থেকে নামানো কাঁচা রসের স্বাদ যেমন অবর্ণনীয়, তেমনি জ্বাল করা রসের তৈরি বিভিন্ন পিঠা পুলির স্বাদও অমৃত। তাছাড়া, খেজুর রসের পাটালি গুড়েরও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সময়ের পরিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস। যশোর, ফরিদপুর, মধুপুর সহ বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে খেজুর গাছ থাকলেও গাছির অভাবে মিলেছে না রসের দেখা। সভ্যতার উন্নয়নের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গাছিরা। খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে সংসারের যাবতীয় খরচ তারা সামলাতে পারছেনা। তাই বর্তমানে এ ব্যবসার প্রতি তাদের তেমন আগ্রহ নেই বললেই চলে। গত এক দশক আগেও গ্রামেগঞ্জে বাড়ি বাড়ি খেজুরের রস বিক্রি একটা সাধারণ ব্যাপার ছিলো। আর এখন হাট বাজারেও মেলে না রসের দেখা। প্রান্তিক কৃষকদের জমির সীমানায় এবং বসত ভিটায় এক দুটি খেজুর গাছ লাগানো এবং সংরক্ষণে উৎসাহিত করার জন্য কৃষি অধিদপ্তরকে টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি, বাংলার পুরনো সংস্কৃতি ধরে রাখতে সরকারি বেসরকারি উভয় পর্যায়ে সমানভাবে কাজ করে যেতে হবে। তবেই বাঁচবে খেজুর গাছ ও রস, বাঁচবে বাংলার ঐতিহ্য।
লেখক: শিক্ষার্থী