রঞ্জনা (বৈজ্ঞানিক নাম: Adenanthera pavonina) একটি ভেজষ উদ্ভিদ। এটি রক্তচন্দন বা লাল চন্দন নামেও পরিচিত। এ গাছের বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে। এন্টিসেপ্টিক হিসাবে, বাতের ব্যথায় ও এন্টিইনফ্লামেশনে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। অন্যান্য স্থানীয় নামের মধ্যে Red Sandalwood, Coral wood, Peacock Flower Fence, Red beadtree, উল্লেখযোগ্য। এটি Fabaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটা ব্রাজিল, বাংলাদেশ, ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়।
বিশ্ববাজারে রক্ত চন্দন কাঠের চাহিদা ব্যাপক। আন্তর্জাতিক বাজারে ভাল জাতের রক্ত চন্দন কাঠের দাম টন প্রতি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯০ লাখের কাছাকাছি। এই রক্ত চন্দন কাঠের বাজার নিয়েই গড়ে উঠেছে সমপ্রতি হৈ-চৈ ফেলে দেওয়া ভারতীয় তেলেগু ভাষার সিনেমা “পুষ্পা দ্যা রায়াইজ” এর চিত্রনাট্য। আল্লু অর্জুন এবং রাশমিকা মান্দানা অভিনীত সিনেমা দেখানো হয়েছে কেন্দ্রীয় চরিত্রে পুষ্পা কিভাবে কাঠ পাচার করে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। মূলত পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই কাজ খুব ভালো হয়। একটি গাছের উচ্চতা প্রায় ৮ থেকে ১২ মিটার। পুষ্পার সাফল্যের সঙ্গে আলোচনার তুঙ্গে যে রক্ত চন্দন, কেন এই কাঠের এত চাহিদা এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে! আসলে রক্তচন্দনের আরেক নাম “লাল স্বর্ণ”। স্বর্ণের মতো মূল্যবান বিরল প্রজাতির এই উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয়। ইনস্টিটিউট অফ উড সাইন্স এন্ড টেকনোলজি মতে, এ উদ্ভিদ অধীন শরীরকে শীতল করে, জ্বালাপোড়া কমায়, রয়েছে রক্ত শুদ্ধিকরণের গুণও। মাথাব্যাথা, চর্মরোগ, জ্বর, পোঁড়া, বিশ্চিক এর কামড়ের চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয় রক্তচন্দন।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতেও এর অবদান রয়েছে। পূজা-অর্চনা প্রসাধনীতে দ্রব্য তৈরিতেও অনেক আগে থেকেই রক্তচন্দনের ব্যবহার হয়ে আসছে। গবেষণা বলছে বাদ্যযন্ত্র এবং বিলাসবহুল আসবাবপত্রের জন্য এই কাঠ ভালো কাঁচামাল। এছাড়া রক্তচন্দন এক ধরনের রঞ্জক উৎপাদন করে থাকে যা খাদ্যের এবং ওষুধের ব্যবহার যোগ্য। এই গাছের বাকল এবং কাঠ থেকে প্রাপ্ত নির্জ্জাসেও বেশ কিছু ওষুধি গুণ রয়েছে। এমন কি জাহাজ নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হয়। যখন থেকে দুর্লভ এবং বিলুপ্তির পথে থাকা এই উদ্ভিদের কাটা বিক্রয় এবং রপ্তানিসহ সকল প্রকার কারবার নিষিদ্ধ তখন থেকেই গাছটির চোরাচালান বেড়েছে কয়েকগুণ।
মোট দু’রনের চন্দন কাঠ পাওয়া যায়, সাদা এবং লাল। সাদা চন্দনের সুগন্ধি থাকলেও লাল রক্ত চন্দনের কোন সুঘ্রান নেই। কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণের জন্য বিশ্বজুড়ে এর চাহিদার বিপুল। সেই চাহিদার কারণে এই কাঠ পাচার হয়ে থাকে মূলত। International Union for Conservation of Nature ২০১৮ সালের এই গাছকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকাভুক্ত করেছে।