করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঝূঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে সারা দেশে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ১০ দিন বাড়ানো হয়েছে। দেশে করোনা সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে জনসমাগম এড়ানোর ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে এবার।
গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বের সকল বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় শর্ত যোগ করে মেয়াদ ৬ জুন মধ্যরাত থেকে ১৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ভারত সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব এলাকায় লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের ভারতে পাওয়া যে ধরনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডেলটা’, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সে ধরনটির সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে, সামপ্রতিক সময়ে সংক্রমণের হার বিবেচনায় যেসব জেলা ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ আছে, সেখানে জেলা প্রশাসকরা সংশ্লিষ্ট কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিজ নিজ এলাকায় সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
বিধিনিষেধের মধ্যে দেশে সব ধরনের পর্যটনস্থল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাগম হয় এ রকম কোনো সামাজিক (বিবাহোত্তর সংবর্ধনা, ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি), রাজনৈতিক বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি ও সরবরাহ (টেইকঅ্যাওয়ে/অনলাইন) করতে পারবে। পাশাপাশি অর্ধেক আসনে বসে খাওয়ার সুযোগ থাকবে। আন্তঃজেলা বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে যাত্রীসহ সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
মহামারী বিস্তারের ঊর্ধ্বগতি রোধে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা সর্বাত্মক লকডাউন নামে পরিচিতি পায়। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস আগের মতোই বন্ধ আছে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি রয়েছে।
সর্বাত্মক লকডাউন শুরুর পর আন্তঃজেলা বাসের পাশাপাশি ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২৩ মের পর অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন বা লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। রোজার আগে বিধিনিষেধ শিথিল করে দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এখনও সেই নিয়মই বহাল আছে।