নিরাপদ আবাসস্থল ও উপযুক্ত পরিবেশে মানিয়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আফ্রিকান প্রজাতির জেব্রার প্রজননে সফলতা এসেছে। দুই বছর সাত মাস আগে তিন জোড়া জেব্রা আনার পর থেকে প্রজনন বাড়াতে পার্ক কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। অবশেষে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় আসে সফলতার সেই মোক্ষম সময়। একটি মাদী জেব্রা বাচ্চা প্রসব করার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায় পার্কের জেব্রার বেষ্টনী। বিজয়ের মাসে জন্ম নেওয়ায় বাচ্চাটির নাম রাখা হয়েছে ‘বিজয়’। গতকাল দুপুরে জেব্রা বেষ্টনী ঘুরে দেখা গেছে, নতুন অতিথিকে কাছে পেয়ে বেষ্টনীতে থাকা জেব্রা পরিবারের অন্য সদস্যরাও ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। বাচ্চাকে সার্বক্ষণিক ঘিরে রেখেছে মা জেব্রা। কিছুক্ষণ পরপর বাচ্চাটি মায়ের কাছ থেকে দুধ খাচ্ছে। জেব্রার বেষ্টনীতে নতুন অতিথি আসার খবরে পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও খুশি।
পার্ক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর জেব্রা পরিবারে নতুন সদস্য যোগ হওয়ার মধ্য দিয়ে চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক জেব্রার প্রজননে নিরাপদ আবাসস্থল এবং উপযুক্ত পরিবেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রেখে আগামীতেও জেব্রার প্রজননে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জেব্রাগুলোর দেখভালে নিয়োজিত রাজীব কুমার দে বলেন, জেব্রাগুলো পার্কে আনার পর থেকেই সন্তানের মতো লালন করেছি। কাছে গিয়ে খাবার খাইয়েছি। দীর্ঘ সময় সান্নিধ্যে থাকায় জেব্রাগুলোও আমাদের গন্ধ পেলে কাছে চলে আসে।
ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট রাজীব আরো বলেন, অনেক দিন ধরে নতুন অতিথির অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। নতুন অতিথিকে বড় করে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে। সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, নতুন অতিথি সুস্থ ও সবল রয়েছে। প্রসবের পর থেকে মায়ের দুধ পান করছে। মায়ের সাথে হেঁটে বেষ্টনীতে ঘুরছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বাচ্চাটিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, একটি প্রাপ্তবয়স্ক আফ্রিকান প্রজাতির জেব্রার ওজন হয় প্রায় ৪শ কেজি। এরা স্বাভাবিকভাবে ১২ থেকে ১৫ বছর বেঁচে থাকে। পার্কের জেব্রাগুলোর বয়স প্রায় ৫ বছর। জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত জেব্রা মায়ের দুধ খেয়ে বাঁচে। এরপর ঘাস ও লতাপাতা খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলে মা জেব্রা। এদিকে, আবদ্ধ অবস্থায় জেব্রা ২০ থেকে ২৫ বছর বেঁচে থাকে বলে জানান কর্মকর্তারা।
পার্কের সহকারী ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, দম্পতি হিসেবে লাভলী-রাজ, উর্মি-উৎপল ও ঊষা-সিয়াম নামে প্রথমবারের মতো বিপরীত লিঙ্গের তিন জোড়া জেব্রা পার্কে আনা হয়। এই প্রথম বাচ্চা প্রসব করল লাভলী। বিজয়ের মাসে জন্ম নেওয়া সেই বাচ্চার নাম রাখা হয়েছে ‘বিজয়’। অবশ্য একটি মাদী জেব্রা (ঊষা) বিষধর সাপের কামড়ে মারা গেছে।
পার্কের কর্মকর্তারা জানান, জেব্রা তৃণভোজী ও শান্ত স্বভাবের হয়। এদের প্রধান খাবার নরম ঘাস ও ভুসি।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ আজাদীকে বলেন, বাংলাদেশের বনাঞ্চলে জেব্রার কোনো প্রজাতি নেই। এগুলো আফ্রিকান প্লেইন প্রজাতির জেব্রা। প্রজননে সফলতা আসার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কই আফ্রিকান এসব জেব্রার চিরচেনা সেই আবাসস্থল ও উপযুক্ত পরিবেশ। আমি আশা করছি, আগামীতেও জেব্রার প্রজননে এই পার্ক সফলতা দেখাবে।
প্রসঙ্গত, বিদেশ থেকে পাচার হয়ে আসার পর যশোরের শার্শা সীমান্তে বনবিভাগ ও কাস্টমসের হাতে ধরা পড়ে ৮টি জেব্রা। এর পর আদালতের নির্দেশে প্রথমে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, সেখান থেকে ৬টি জেব্রা চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পাঠানো হয়।